About

.

কলা খান সুস্থ থাকুন

কলা কেবল ফল হওয়ার খ্যাতি ছাড়িয়েও অনেক দূর ওপরে উঠেছে। কথাটি সত্য, কলার মধ্যে অন্য ফলের তুলনায় জলীয় অংশ কম। মানে হলো, এক কামড় কলা থেকে শ্বেতসার বেশি পাওয়া যায় অন্য ফলের চেয়ে; তাই ক্যালরিও পাওয়া যায় বেশি। পানির কোনো ক্যালরি মূল্য নেই, তাই যে ফলে জলীয় ভাগ বেশি, প্রতি সার্ভিংয়ে তার ক্যালরি মূল্যও কম।
তবে এর মানে এই নয় যে কলা খাওয়া বাদ দিতে হবে, ওজন-সচেতন হলেও। কলায় নেই কোনো চর্বি, কোলেস্টেরল বা সোডিয়াম। আর কলা খুব পুষ্টিকর। কলায় রয়েছে প্রচুর পটাশিয়াম, যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। আবার কলায় রয়েছে বেশ ভিটামিন-বি৬, যা রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে সহায়ক এবং শরীরের প্রোটিন, স্নায়ুকোষ ও ইমিউন কোষ নির্মাণেও সহায়ক। আছে ভিটামিন-সি, যা দেহ প্রতিরক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ। আরও আছে আঁশ, যা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ ও পরিপাক নালির স্বাস্থ্য বজায় রাখতে সাহায্য করে।
খুব ক্যালরি-সচেতন হলে ছোট কলা পছন্দ করুন, হাতের বড় আঙুলের সমান কলা। এসব ছোট কলা থেকে পাবেন মাত্র ৫০-৬০ ক্যালরি (ছোট আপেলের চেয়েও কম)। ফালি ফালি করলে অর্ধেক কাপ হবে।
ছোট কলা ৬-৭ ইঞ্চি: ৯০ ক্যালরি
মাঝারি কলা ৭-৮ ইঞ্চি: ১০৫ ক্যালরি
বড় কলা ৮-৯ ইঞ্চি: ১২১ ক্যালরি
এক্সট্রা লার্জ কলা (৯ ইঞ্চির চেয়ে বেশি): ১৩৫ ক্যালরি।
পেটটা যাতে চ্যাপ্টা থাকে, সেজন্য যেসব খাবারের পরামর্শ আছে, এর মধ্যে কলা অন্যতম। পুষ্টিকর, খুব পুষ্টিঘন খাবার হিসেবে কলার জুড়ি কম।
একটা কথা বলি, কোনো বিশেষ খাবার খেলে মানুষ মোটা হয়, এমন কথা মানা যায় না। আপনি তখনই মোটা হবেন, যখন যে পরিমাণ ক্যালরি নিচ্ছেন, সে পরিমাণ ক্যালরি ব্যায়াম করে পুড়িয়ে ফেলতে পারছেন না। সঠিক পরিমাণে খেলে কোনো খাবারই শরীরকে স্থূল করতে পারে না। তাই হাতের আঙুলের সমান কলা খেলে ক্যালরি আর কতই খাওয়া হবে! চম্পক অঙ্গুলি, চাঁপা কলা—এসব অনেকেরই পছন্দ, নয় কি? দই, মুড়ি বা খইয়ের সঙ্গে ফালি ফালি কলা—তোফা নাশতা!
দুধভাতে কলা চটকে খেতেও মজা। ফলের সালাদে কলা ভালো অনুষঙ্গ। চকলেট, আইসক্রিমেও থাকতে পারে কলা। কলা দিয়ে নতুন নতুন রেসিপি হতে পারে। তাই যাঁরা ফলের বাজারে সওদা করছেন, তাঁরা বাজারের থলেতে কলা অবশ্যই নেবেন। শুনেছি, সংগীতশিল্পীরা পারফর্ম করার আগে কলা খেয়ে নিলে নার্ভাসনেস ও টেনশন নাকি কমে। কলার এই গুপ্ত কৌশল কারও কি জানা আছে? সত্যি কি?

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
কলা হোক প্রিয় খাবার পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল
সাম্মানিক অধ্যাপক, ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো,

শিশুর জন্য সুষম খাদ্য

স্বাস্থ্য সুঠাম ও অটুট রাখতে হলে সঠিক খাদ্য নির্বাচন করা খুবই প্রয়োজন। দেখা গেছে: মাছ, মাংস বা ডাল, দুধ, ভাত বা রুটি, ফল-সবজি, পানি এই পাঁচ জাতের খাদ্য আমাদের প্রতিদিনের খাবারে থাকলে আমাদের স্বাস্থ্য রক্ষা হয়। এই খাবারগুলোর প্রতিটির পরিমাণ এমন হতে হবে, যাতে কেলোরি, ভিটামিন, খণিজ-লবণ, পানি- এই চারটি জিনিসেরই দৈহিক চাহিদা ঠিকমত পূরণ হয়; আর এ-রকম খাদ্যই হচ্ছে সুষম খাদ্য। সাধারণভাবে বলা যায়, উপরে যে ছয় ধরনের খাবারের উৎস লিখা হয়েছে, এর প্রতিটি উৎস থেকে একটি বা দুটি পছন্দসহ খাবার-যা স্থানীয়ভাবে পাওয়া যায় এবং দামেও কম-বেছে নিয়ে মিলিয়ে প্রতিদিন খেলে দেহের খাদ্য-চাহিদা পূরণ হয়। প্রতিদিনই মাছ, মাংস বা ডিম জোগাড় করা না গেলে দুশ্চিন-ার কিছু নেই, এ-গুলোর পরিবর্তে ডাল, সিমের বিচি বা ছোলা খেলেও চলবে। অনেক শিক্ষিত পরিবারে-এ রকম দেখা যায়: ছেলে পছন্দ করে তাই তাকে ভাত, চিনি ও ঘি দিয়ে খাবার দেয়া হয়। এ-ভাবে খেলে তার কাজ করার শক্তির চাহিদা কিছুটা মিটবে, কিন্তু এই খাবারে আমিষ-লবণ-ভিটামিনের অভাবহেতু তার শরীরের ক্ষয়পূরণ ও বৃদ্ধি-সাধন হবে না, শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ও জন্মাবে না।

আমাদের খাওয়ার অভ্যাস
খাবার দামী হলেই যে তা সব সময় ভাল খাবার হবে, এর কোন মানে নেই। কম দামের খাবার থেকেও দেহের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যাপাদান পাওয়া যেতে পারে। মাছ, মাংস ও ডিমের দাম বেশী; এ সমস্ত আমিষ জাতীয় খাদ্যের অভাব আমরা কম দামের খাদ্য, যেমন ডাল, সিম, ছোলা ইত্যাদি দিয়ে পূরণ করতে পারি। হয়তো অনেকেই জানেন না যে, ডালে প্রচুর আমিষ থাকে, ডাল থেকে ভিটামিন এবং খণিজ লবণও পাওয়া যায়।

ভাত-ডাল-তেল-সবজি (কলা-পেঁপে-লাউ) এবং সম্ভব হলে মাংস, কলিজা বা ডিম মিলিয়ে যে খিচুড়ি তৈরী করা হয়, তা খুবই মুখরোচক এবং পুষ্টিকর। এতে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় ছয়টি খাদ্যাপাদানই বর্তমান থাকে। চালের চেয়ে গম কম পুষ্টিকর নয়। গমের দামও কম। দুই-এক বেলা আটার রুটি বা আলুর চপ খেয়েও আমরা চালের চাহিদা কমাতে পারি। সবুজ শাক-সবজিতে প্রচুর ভিটামিন ও খনিজ লবণ আছে। গ্রামে প্রায় প্রত্যেকের বাড়ীতেই রান্নাঘরের পাশে ছোট্ট এক চিলতে জায়গা থাকে। এতে সহজেই মৌসুমী ফল-মূল ও শাক-সবজি ফলানো যায়। তাহলে, শাক-সবজি বাজার থেকে কম কিনতে হয়।

অনেকেই মনে করেন: ফল দামী হলেই বুঝি এর খাদ্যমান বেশী হয়। এ ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। আপেল ও কমলালেবুর দাম পেয়ারা বা আমলকির চাইতে অনেক বেশী; কিন্তু পেয়ারা বা আমলকিতে যে পরিমাণ ভিটামিন ‘সি’ রয়েছে, তা কমলালেবু ও আপেলের চাইতে অনেকগুণ বেশী। উপরোন্ত, পেয়ারাতে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ রয়েছে। আঙ্গুরের খাদ্যমান অত্যন্ত নিম্নমানের।

অধ্যাপক ডা. এম আর খান
লেখক : জাতীয় অধ্যাপক এবং
প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ

টিনএজে ডিপ্রেশন : পিতা-মাতার করণীয়

টিন এজে হচ্ছে মুক্ত বিহঙ্গের কাল। খোলা আকাশের অসীম নীলিমার মতো বিশাল কল্পনার জগতে ঢুকে পড়ে কিশোর কিশোরীরা। তাদের নিজেদের অপরিপক্কতার কারণে তুচ্ছ বাধাকে মনে হতে পারে অতি বড় বিপর্যয়। এভাবে তাদের মনে হতাশা বাসা বাঁধে গোপনে। ফলে তারা কনফিউজড হয়ে যেতে পারে। সব কিছুতে অতি মাত্রায় সংবেদনশীল এবং মুডি হয়ে যেতে পারে। আর এর প্রভাব পড়ে তাদের বাইরের আচরণে।

অনেক সময় সমস্যায় জড়িয়ে থাকা টিন এজেররা নিজেদের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতে পারে না। স্কুলে কিংবা বাসায় বিষাদে ডুবে থাকে। তারা জানেই না যে, বিষাদে ভুগছে। বাবা-মাও বুঝতে পারেন না। তাদের কষ্ট বাইরে থেকে বুঝা যায় না। খারাপ আচরণগুলো ডিপ্রেশনের কারণে ঘটতে পারে। যা সহজে টের পাওয়া যায় না। হয়তো ডিপ্রেশনের সাথে ফাইট দিচ্ছে, কিন্তু আবেগ বা মুডের ব্যাখ্যায় যথাযথ শব্দ উপস্থাপন করতে পারে না। ডিপ্রেশন থাকলেও জানে না যে, সে সমস্যায় আছে। কাউকে বলে না বা সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য কারো সাহায্য চায় না। সাধারণত মন খারাপ, বিষাদ বা ভালোলাগা বেশি দিন স্থায়ী হয় না। তবে বিষন্নতা বা মন খারাপ যদি জোরালো হয়, দিনের বেশিরভাগ সময় জুড়ে থাকে কিংবা এক নাগাড়ে দুই সপ্তাহ পেরিয়ে যায়-তাহলে কোনোরূপ দোদুল্যমনতায় না ভুগে মনোচিকিৎসকের সাথে দ্রুত যোগাযোগ করতে হবে।

বিষন্নতার উপসর্গগুলো কী কী


বিষন্নতা রোগের গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হচ্ছে স্থায়ী অসুখী অনুভূতি, স্বাভাবিক কাজ করার প্রতি অনাগ্রহ, অক্ষমতা, অনুভূতির উপর নিয়ন্ত্রণহীনতা ইত্যাদি। আশাহত, অসহায়ত্ব এবং পাপবোধে জড়িয়ে যাওয়া। যার সাথে তাদের বিন্দুমাত্র যোগাযোগ নেই, সেই সব বিষয়ের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলা, নিজের দোষ খোঁজা ইত্যাদি উপসর্গগুলোকেও অবহেলা করা যাবে না। এছাড়াও আরো কিছু উপসর্গ রয়েছে যেমন:

ক) ঘুমের সমস্যা্‌

খ) ওজন ও ক্ষুধার সমস্যা্‌ ,

গ) দৈহিক শক্তি কমে যাওয়া ,

ঘ) আনন্দময় জীবন যাপন থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেয়া ,

ঙ) মনোযোগের অভাব, ভুলে যাওয়া্‌

চ) খারাপ সময়

ছ) খারাপ চিন্তা ।

সামপ্রতিক বিশ্বে কিশোর কিশোরীদের আত্মহত্যা 

উঠতি বয়সী কিশোর কিশোরী জীবনের সোনালী দিনের হাতছানি পেয়ে এগুতে থাকে। চলার পথ সময় সময় মসৃন নয়। তাই অনভিজ্ঞতার কারণে অনেক কিছু বোঝে না তারা। আচমকা ব্যর্থতার গ্লানি সইতে পারে না। চরম হতাশা জাগে মনে। বেঁচে থাকার অর্থ খুঁজে পায় না বলে শেষে আত্মহত্যা করে বসে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, বিশ্বে প্রতি বছর ৪০ লক্ষ কিশোর কিশোরী আত্মহত্যার চেষ্টা করে। গবেষণায় দেখা গেছে, এর পেছনে অনেক কারণ জড়িত রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপট, বিষাক্ত দ্রব্যাদি ও অ্যালকোহলের সহজপ্রাপ্যতা। পশ্চিমা দেশগুলোতে আত্মহত্যার সাথে জড়িত রয়েছে বিষাদরোগ ও অন্যান্য মানসিক সমস্যা। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে আত্মহত্যার সাথে স্পষ্ট সংশ্লিষ্টতার কারণ ধরতে না পারলেও বলা হচ্ছে পারিবারিক, সামাজিক, আর্থিক, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক ফ্যাক্টরগুলো আত্মহননের পথকে উসকে দেয়। আমাদের দেশে সুনির্দিষ্ট গবেষণার রিপোর্ট না থাকলেও প্রায়ই দেখা যায় পরীক্ষার ফল বিপর্যয় ছাড়াও কোনো কিশোরী নির্যাতিতা হলে, পাড়ার মাস্তান কিংবা সন্ত্রাসীদের হাত থেকে সম্ভ্রম বাঁচাতে কেউ কেউ গলায় ফাঁস দিচ্ছে, কেউ আবার কীটনাশক বা বিষ খেয়ে অপমান আর লজ্জা থেকে নিজেকে নিস্কৃতি দিচ্ছে। অনেক টিন এজে প্রেমিক প্রেমিকা প্রেমে ব্যর্থতার কষ্ট সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে বসে। গ্রাম এলাকায় অশিক্ষিত, অল্পশিক্ষিত দরিদ্র পরিবারের অনেক কিশোরী মাতা মাস্তানের পিতিৃত্বের দাবিতে বিচার না পেয়ে হতাশা আর বিষাদে ডুবে নিজেকে শেষ করে দেয়। টিনএজ কিশোররা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে এক সময়ে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। ব্যাপকভাবে তাদের মনোজগতে ধস নামে বলে এক সময় আত্মহত্যা করে বসে। অধিকাংশ কিশোর কিশোরী, যারা আত্মহত্যার চেষ্টা করে, এক পর্যায়ে তাদের মনোজগত এলোমেলো হয়ে পড়ে। মানসিকরোগ যেমন বিষাদে ডুবে যায় তারা। টিনএজারদের এই বিষন্নতা এবং আত্মহননের ইচ্ছে বা অনুভূতি প্রতিরোধ করা সম্ভব। জয় করা সম্ভব সমস্যাকে।

উল্লেখিত কারণসমূহ বিশ্লেষণ করে বলা যায়, আত্মহত্যা হচ্ছে জীবনের বেদনাদায়ক একটি প্রতিচিত্র। সফলতার সাথে এই করুণ অধ্যায়টি প্রতিরোধ করা সম্ভব।

আত্মহত্যার প্রতিরোধ ও চিকিৎসা

০ প্রাথমিক অবস্থায় ঝুঁকি নির্ণয় এবং চিকিৎসা। ডিপ্রেশন সনাক্ত করা সম্ভব হলে চিকিৎসা অনেক সহজ

০ কিশোর কিশোরীদের সহজ হাতের নাগাল থেকে কীটনাশক দ্রব্যাদি দুরে রাখা

০ তাদের যে কোনো সমস্যার কথা মনোযোগ দিয়ে শোনা এবং সমাধানের উদ্যোগ নেয়া

মা-বাবার করণীয়

টিন এজে সন্তানের সমস্যাগুলো বাবা-মাকে ধরতে হবে প্রথমে। তাদের মনোজগতের ঝড়, কষ্ট, রাগ, বিরক্তি, বিদ্রোহী মনোভাব কৌশলে সামাল দিতে হবে। প্রয়োজনে নিতে হবে প্রফেশনাল হেল্প। মনোচিকিৎসায় এ ধরনের সমস্যাগুলোর যথাযথ বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা সম্ভব। টিনএজার নিজেকে হননের উদ্যোগ নিলে অবশ্যই বাবা-মাকে উদ্যোগ নিতে হবে। তাকে বুঝতে দিতে হবে যে একা নয়। যতক্ষণ পর্যন্ত তাকে মনোচিকিৎসকের কাছে হাজির করা না যায়, ততক্ষণ তার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। চিকিৎসার পরেও সতর্কতা কমানো যাবে না। পরিপূর্ণ চিকিৎসা না করা পর্যন্ত তার প্রতি নজর রাখতে হবে। বাবা-মার মনে রাখা জরুরি, আত্মহত্যার চিন্তা, পরিকল্পনা বা প্রচেষ্টা মানসিক চিকিৎসায় সর্বোচ্চ জরুরি অবস্থা। এছাড়াও বাবা-মাকে আরো যা যা করতে হবে:

০ সন্তানকে বেশি বেশি সময় দিতে হবে। তার প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে হবে। সন্তানকে বুঝতে দিতে হবে যে, সবাই তার সাথে আছে

০ সন্তানের সমস্যার ব্যাপারে নিজের জানার পরিধি বাড়াতে হবে। শিশু বড় হওয়া, বেড়ে উঠা ইত্যাদি বিষয়ে বৈজ্ঞানিক ধারণা অর্জন করতে হবে

০ সন্তানকে বিভিন্ন কাজে উৎসাহ দিতে হবে

০ সন্তানকে কথা বলার জন্য উৎসাহী করতে হবে। তার নিজের অনুভূতি প্রকাশের সুযোগ করে দিতে হবে

০ ভালো বন্ধুদের সাথে বেশি বেশি মেশার জন্য উদ্ধুদ্ধ করতে হবে

০ যাকে বিশ্বাস করে, যার প্রতি আস্থাশীল, তার সাথে সব ধরণের অনুভূতি শেয়ারে ক্ষেত্র তৈরী করে দিতে হবে

০ সন্তানের আনন্দময় বিষয়ের দিকে নজর দিতে হবে। তার সাথে আনন্দময় কাজে বেশি করে অংশ নিতে হবে।

ডাঃ মোহিত কামাল সহযোগী অধ্যাপক জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা
সূত্র: দৈনিক ইত্তেফাক

নাকের ফাংগাল ইনফেকশন: রাইনোস্পরিডিওসিস

নাকের ফাংগাল ইনফেকশনকে রাইনোস্পরিডিওসিস বলা হয়। এই ইনফেকশন নাক ছাড়াও দেহের অন্য অঙ্গেও হতে পারে।

কিভাবে ছড়ায়ঃ ফাংগাল স্পোর গরু-ছাগল, ঘোড়ার মলদ্বারা পুকুরের পানি ও বাতাসে ছড়ায়। এই স্পোর সংক্রমিত পানিতে গোসল করলে বা সংক্রমিত বাতাসে শ্বাস গ্রহণ করার মাধ্যমে তা মানুষের দেহে প্রবেশ করে। নাকে কোনো ক্ষত থাকলে সেই ক্ষত দিয়ে জীবাণু ছড়াতে থাকে। এই স্পোর নাকের সাব মিউকোসাতে বংশ বৃদ্ধি করে স্পোরানজিয়া গঠন করে। এই স্পোর জার্মিনাল পোর-এর মধ্য দিয়ে ভেঙে যায় এবং টিস্যুতে নিঃসরিত হয় এবং টিস্যুতে রিএকটিভ হাইপারপ্লাসিয়া হয় এবং পলিপের মতো বা টিউমারের মতো দেখতে অনেকটা স্ট্রবেরি ফলের মতো দেখায়।

কাদের এবং কোথায় বেশি হয়ঃ নাকের ছত্রাকজনিত রোগ পুরুষের বেশি হয়। সাধারণত ১১ থেকে ৪০ বছর বয়সে বেশি হয়। তবে যে কোনো বয়সে এবং মহিলারাও এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে। এই রোগ ভারতীয় উপমহাদেশে যেমন বাংলাদেশ, ভারত, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে বেশি হয়ে থাকে।

রোগের লক্ষণসমূহঃ নাক বন্ধ হওয়া, নাক দিয়ে রক্ত পড়া, নাকে চুলকানি হওয়া, নাকে টিউমারের মতো বা পলিপের মতো কিছু (স্ট্রবেরি ফলের মতো) দেখা যেতে পারে।

রোগ নির্ণয়ের পদ্ধতিঃ বায়োপসি এবং হিস্টোপ্যাথলজি করে রোগ নিশ্চিত করা যায়।

চিকিৎসাঃ পলিপয়েড মাস এবং আশপাশের আক্রান্ত জায়গায় সম্পূর্ণ এবং বিস্তৃতভাবে অপারেশন করতে হবে। কেটে ফেলা স্থানটি কটারাইজেশন করতে হবে। এতে করে রক্তপাত কম হবে এবং আবার আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
লেখকঃ প্রফেসর ডা. এম আলমগীর চৌধুরী
বিভাগীয় প্রধান, নাক, কান ও গলা বিভাগ, মেডিকেল কলেজ ফর উইমেন, উত্তরা, ঢাকা।
সূত্রঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত,

কানের কি কি অসুখ হয়ে থাকে

নাক কান ও গলা শরীরের এই তিনটি অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের রোগব্যাধি হতে পারে। সাধারণ হাঁচি-সর্দি থেকে শুরু করে গলার ক্যান্সার সবই রয়েছে এই তালিকায়। স্বল্পপরিসরে সেইসব রোগের কয়েকটি সম্পর্কে ধারণা দেয়া হল।
কানপাকা রোগঃ কানের রোগগুলোর অন্যতম। কান পাকা রোগ দুই ধরনের। একটি হচ্ছে নিরাপদ ধরনের, অন্যটি মারাত্মক ধরনের। নিরাপদ ধরনের কানপাকা রোগে কান থেকে কানের পর্দা ছিদ্র থাকে। কান দিয়ে পুঁজ পড়ে। কানেব্যথা হয়, কান চুলকায়, কানে কম শোনা যায়। প্রাথমিক অবস্থায় কিছু ওষুধ ব্যবহার করে ও উপদেশ মেনে চলে রোগ নিরাময় করা যায়। তবে এতে কানের পর্দা জোড়া লাগেনা। তবে অপারেশন করে কানের পর্দা জোড়া লাগানো যায়। মারাত্মক ধরনের কানপাকা রোগে কান দিয়ে সবসময়েই একটু করে কষের মত ঝরে। কানের এই কষ পঁচা দুর্গন্ধযুক্ত হয়ে থাকে। বিশেষজ্ঞরা এই দুর্গন্ধ থেকেই রোগটির ধরন বুঝতে পারেন। মারাত্মক ধরনের কানপাকা রোগে অপারেশনই হচ্ছে প্রকৃত চিকিৎসা। উভয় ধরনের কানপাকা রোগ জটিল হয়ে কানের পুঁজ মস্তিষ্ক পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারে। এ ধরনের জটিলতায় কানে অপারেশন লাগে। অনেক ক্ষেত্রে রোগ নিরাময়ের পাশাপাশি রোগীর জীবন বাঁচানোর জন্য এই অপারেশন করতে হয়। কান পাকা রোগ নিয়ে কখনোই হেলা ফেলা করা উচিত নয়।

মধ্যকর্ণে প্রদাহঃ এই সমস্যা শিশুদের বেশি হয়ে থাকে। তবে বড়দেরও হয়ে থাকে। সাধারণত উর্ধ্বশ্বাসনালীর প্রদাহ, টনসিলের ইনফেকশন, এডিনয়েড নামক গুচ্ছ লসিকা গ্রন্থির বৃদ্ধি ইত্যাদি থেকে এই ইনফেকশন হয়ে থাকে। এই রোগে কানে বেশ ব্যথা হয়, কান বন্ধ মনে হয়। সঠিক সময়ে এই রোগের চিকিৎসা না করলে কানের পর্দা ফুটো হয়ে রোগটি কান পাকা রোগে রূপ নিতে পারে। এন্টিবায়োটিক ও নাকের ড্রপসহ অন্যান্য ওষুধ হচ্ছে এই রোগের চিকিৎসা।

মধ্যকর্ণে পানির মতো তরল জমাঃ এই রোগের কারণও উপসর্গ অনেকটা মধ্যকর্ণে প্রদাহের মতই । তবে উপসর্গসমূহের তীব্রতা অনেক কম থাকে। সাধারণ ওষুধেই এ রোগ সারে। অনেক সময় ছোট্ট অপারেশন করে মধ্যকর্ণে জমে থাকা পানি বের করে দিতে হয়।

কানে ফাঙ্গাস ও কানে ক্ষতঃ কানের মধ্যে অনেক সময় ফাঙ্গাস এবং ক্ষত হয়। সাধারণত কান খোঁচানোর জন্য কানের মধ্যে ফাঙ্গাস হয়ে থাকে। কান পরিষ্কার করা কিংবা কান খোঁচানো অনেক সময় একই বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। এসব কাজে ব্যবহার করা হয় কটনবাড থেকে মুরগির পালক, কলমের মুখ, চুলের ক্লিপ ইত্যাদি। এসব কিছুই কানের এই রোগটির জন্য দায়ী। কানে ফাঙ্গাস হলে কান মূলত চুলকায়। সাথে ইনফেকশন বেড়ে প্রদাহ হলে ব্যথা হয়, কষ ঝরে ও কান বন্ধ হয়ে থাকে। অনেক সময় কানের ভিতরে ক্ষত হয়ে ফাঙ্গাসের সাথে কানের বাইরের পথটিতে ক্ষত সৃষ্টি হলে ব্যথা মারাত্মক আকার ধারন করে। তবে চিকিৎসায় পুরো সেরে যায়। তবে ওষুধের চিকিৎসা শুরুর আগে ইএনটি বিশেষজ্ঞ দিয়ে কান পরিষ্কার করিয়ে নিতে হবে।

কানে ওয়াক্স বা খোলঃ
কানে ওয়াক্স বা খোল অতি পরিচিত সমস্যা। এই খোল অনেকেই পরিষ্কার করার চেষ্টা করেন। নিজে এটি পরিষ্কার করা ঠিক নয। নিজে পরিষ্কার করতে গেলে জমে থাকা খোলের বেশিরভাগই ভিতরে চলে যায়। ফলে বিপত্তি আরো বাড়ে। কানে খোল আটকে গেলে কানে ব্যথা হয়, কানে কম শোনা যায় কান বন্ধ থাকার কারণে। ইএনটি স্পেশালিস্ট কান দেখে এটি পরিষ্কার করে দিতে পারেন। তাবে পরিষ্কার করা সম্ভব না হলে খোল গলানোর ওষুধ রয়েছে। তাতেও কাজ না হলে কিংবা অবস্থা বেশি খারাপ হলে অজ্ঞান করে কান পরিষ্কার করে দিতে হয়। যাদের কানে খোল হওয়ার প্রবনতা রয়েছে তারা নিয়মিত কানে ৪/৫ ফোঁটা করে অলিভ অয়েল দিতে পারেন।
লেখকঃ ডা. সজল আশফাক
নাক-কান-গলা বিশেষজ্ঞ,
ইনসাফ ডায়াগনস্টিক অ্যান্ড কনসালটেশন সেন্টার, ১২৯ নিউ ইস্কাটন, ঢাকা।
সূত্রঃ দৈনিক নয়াদিগন্ত