About

.

ধূমপান ত্যাগ করবেন কেন এবং কি ভাবে ত্যাগ করবেন

উন্নয়নশীল দেশে অধিকাংশ পুরুষ ধূমপান করে অসচেতনতা, বন্ধুদের (পিয়ারদের) প্রেসার এবং সিগারেটের অতিমাত্রায় সহজলভ্যতার কারণে। অন্যদিকে, উন্নত দেশে মানুষের সচেতনতা এবং ধূমপানের ওপর বিধিনিষেধ থাকার কারণে ধূমপান করার হার কমে যাচ্ছে এবং সিগারেট কোম্পানিগুলো আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশকে টার্গেট করেছে সিগারেটের ব্যবসা প্রসারের জন্য। উন্নত দেশে নারীরা ধূমপান করে থাকে বিভিন্ন কারণে: কিছু নারী ধূমপান করে স্ট্রেস/চাপ মোকাবিলা করার জন্য অথবা দৈহিক ওজন নিয়ন্ত্রণ করার জন্য; তরুণীরা ধূমপান শুরু করে বিদ্রোহী এবং স্বাধীনচেতা মনোভাবের প্রকাশ হিসেবে অথবা তাদের বন্ধুদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাওয়ার জন্য। মোদ্দা কথা, ধূমপান করার জন্য ভালো কোনো কারণ নেই। ধূমপান মারাত্মক স্বাস্থ্যহানির কারণ ঘটায়।

যেসব স্বাস্থ্যগত কারণে ধূমপান ছাড়বেন
  • ফুসফুস, গলা, মুখ, বাগ্যন্ত্র, খাদ্যনালি, অগ্ন্যাশয়, বৃক্ক, মূত্রথলি, জরায়ুর মুখ এবং পাকস্থলীর ক্যানসার।
  • লিউকেমিয়া (এক ধরনের রক্তের ক্যানসার)।
  • ফুসফুসের অন্যান্য রোগ (যেমন এফাইসিমা)
  • রক্তনালি শক্ত এবং চিকন হয়ে যাওয়া (অ্যাথেরোস্কেলেরোসিস)।  হার্ট অ্যাটাক।
  • স্ট্রোক (ব্রেইনে রক্তক্ষরণের জন্য প্যারালাইসিস)।  দাঁতের মাঢ়ির রোগ।
  • চোখের সমস্যা থেকে অন্ধ হয়ে যাওয়া।

ধূমপান আরও কিছু সমস্যার কারণ, যেমন—
  •   অন্যান্য অসুস্থতা দীর্ঘস্থায়ী করে।
  • অপারেশনের পর সহজেই ক্ষতস্থানে ইনফেকশন হয়।  গর্ভধারণে সমস্যা হয়।
  • কোমর বা ঊরুর হাড় ভাঙার ঝুঁকি বাড়ায়।
গর্ভাবস্থায় ধূমপান সাংঘাতিক খারাপ, কারণ—
  • গর্ভফুল (প্লাসেন্টা) জরায়ু মুখের খুব কাছাকাছি চলে আসে, তাতে সিজারিয়ান অপারেশন ছাড়া বাচ্চা ডেলিভারি করা যায় না।
  • গর্ভফুল সঠিক সময়ের আগেই জরায়ু ছেড়ে আসে, যার ফলে সময়ের আগেই ‘লেবার পেইন’ হয় অথবা গর্ভেই বাচ্চার মৃত্যু হতে পারে। 
  •  গর্ভপর্দা সঠিক সময়ের আগেই ফেটে যায়, পানি বেরিয়ে আসে ‘লেবার পেইন’ শুরু হওয়ার আগেই, ফলে বাচ্চা সময়ের আগেই ভূমিষ্ঠ হয়।
  • কম ওজনের বাচ্চা ভূমিষ্ঠ হয়। 
  • নবজাতকের ফুসফুসের ক্ষতি হয়।

ধূমপান ছেড়ে দিলে আপনি যে বাড়তি সুফলগুলো পাবেন—
আপনাকে ধূমপানের জন্য কর্মস্থল বা বাড়ি ছাড়তে হবে না। আপনার দাঁতগুলো আরও পরিষ্কার হবে। আপনার শ্বাস দুর্গন্ধমুক্ত হবে। আপনার আঙুলগুলোর নিকোটিন-রং হালকা হয়ে যাবে। আপনার ত্বক কুঁচকানো কমে যাবে। খাবারের ঘ্রাণ ও স্বাদ আগের থেকে ভালো উপভোগ করবেন। আপনি অধিকতর শক্তি অনুভব করবেন এবং কর্মক্ষম হবেন।

ধূমপান ছাড়ার উপায়
দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিন এবং ভালো বোধ করুন!
যদি আপনি ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার দৃঢ় সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেন, আপনাকে বিশাল অভিনন্দন! এতে শুধু আপনার স্বাস্থ্যই উন্নত হবে না, আপনি আপনার প্রিয়জনদের স্বাস্থ্যও রক্ষা করবেন পরোক্ষ ধূমপান থেকে। এটা কঠিন সত্য যে ধূমপান একেবারে ছেড়ে দেওয়া অত্যন্ত কঠিন। আপনি কি জানেন, অনেক ধূমপায়ীই মঙ্গলের জন্য ধূমপান ছাড়তে চায় কিন্তু সে চেষ্টা সফল হওয়ার আগে দুই বা তিনবার ব্যর্থ হয়? সিগারেটের মূল উপাদান নিকোটিন একটি সাংঘাতিক আসক্তিকর ড্রাগ: এমনই আসক্তিকর যে তা হেরোইন বা কোকেইনের মতো। সুসংবাদটি হচ্ছে, মঙ্গলের জন্য লাখ লাখ মানুষ ধূমপান ছেড়ে দিতে সমর্থ হয়েছে। ধূমপান ছেড়ে দেওয়া কঠিন কাজ হলেও সম্ভব। আপনি শিহরিত হবেন, যখন নিজেকে ব্যয়বহুল একটি নেশা থেকে মুক্ত করতে পারবেন এবং পরোক্ষ ধূমপানের দ্বারা অন্যের আর ক্ষতি করবেন না।

ধূমপান ছাড়ার পাঁচটি টিপস: (গবেষণালব্ধ ফল)
বিশেষ একটি দিন ঠিক করুন: দিনটির আগের দিন সব সিগারেট, অ্যাশট্রে এবং লাইটার ফেলে দিন, আপনার বাড়িতে কাউকেই ধূমপান করতে দেবেন না। একটি কাগজে লিখে রাখুন কেন আপনি ধূমপান ছাড়তে চান এবং লিস্টটি সংরক্ষণ করুন রিমাইন্ডার হিসেবে।

আপনার পরিবার, বন্ধু এবং সহকর্মীর সহযোগিতা নিন: গবেষণায় দেখা গেছে, অন্যের সহযোগিতা পেলে ধূমপান ছাড়া সহজ। আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের ধূমপান ছাড়ার তারিখটি জানান এবং তাদের সহযোগিতা করতে বলুন। অনুরোধ করুন তারা যেন আপনার চারপাশে ধূমপান না করে অথবা সিগারেট অফার না করে।

ধূমপানের বিকল্প খুঁজুন এবং প্রতিদিনের রুটিন বদলান: যখন ধূমপান করার ইচ্ছে হবে, এমন কিছু করুন, যাতে আপনার মন অন্য কিছুতে ব্যস্ত থাকে। বন্ধুর সঙ্গে কথা বলুন, হাঁটতে বের হয়ে যান, অথবা সিনেমা দেখতে হলে চলে যান। চিনিমুক্ত চুইংগাম বা ক্যান্ডি খান আপনার ধূমপানের আকাঙ্ক্ষাকে কমানোর জন্য। প্রচুর পানি ও জুস খান। এর সঙ্গে আপনি আপনার প্রতিদিনের রুটিন বদলাতে পারেন। কফির পরিবর্তে চা পান করুন। সকালের নাশতা একই জায়গায় প্রতিদিন খাবেন না। কর্মস্থলে যাওয়ার রাস্তা পরিবর্তন করুন।

ধূমপান ছাড়ার ওষুধ গ্রহণ করতে পারেন: চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। কিছু ধূমপায়ীর প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় যদি সে ধূমপান ছেড়ে দেয় যেমন—বিষণ্নতা, ঘুমাতে সমস্যা, বিরক্তবোধ বা অস্বস্তিবোধ করা এবং পরিষ্কার চিন্তা করতে না পারা। কিছু ওষুধ উল্লিখিত উপসর্গগুলো নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে। অধিকাংশ ওষুধ সিগারেটের মূল আসক্তিকর উপাদান নিকোটিনের মাত্রা রক্তে ধারাবাহিকভাবে কম পরিমাণ অবমুক্তকরণের মাধ্যমে কাজ করে। চিকিত্সকের পরামর্শ নিন কোন ওষুধটি আপনার জন্য সঠিক।
নিকোটিন প্যাচ: এটি ত্বকে লাগানো হয় এবং ত্বকের মাধ্যমে দেহে নিকোটিন অবমুক্ত হয়। নিকোটিন গাম/লজেন্স: মুখের ভেতর আবরণীর মাধ্যমে রক্তে নিকোটিন অবমুক্ত হয়। নিকোটিন নেজাল স্প্রে: নাকে স্প্রে করলে নিকোটিন শ্বাসের মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে। নিকোটিন ইনহেলার: মুখ ও গলার মাধ্যমে নিকোটিন রক্তে প্রবেশ করে। বিউপ্রোপিওন: এটি একটি বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ, যেটি নিকোটিন পরিহারজনিত লক্ষণ কমাতে সাহায্য করে এবং ধূমপানের আকাঙ্ক্ষা কমায়। ভ্যারেনিক্লিন (চ্যানটিক্স): ওষুধটি নিকোটিন পরিহারজনিত লক্ষণ এবং ধূমপানজনিত তৃপ্তি কমায়।

পুনঃ ধূমপানের প্রবণতা থেকে সতর্ক থাকুন: অধিকাংশ ধূমপায়ী ধূমপান ছাড়ার প্রথম তিন মাসের মধ্যেই আবার ধূমপান শুরু করে, এতে আশাহত হবেন না। মনে রাখবেন, অনেকের ক্ষেত্রেই এটি ঘটে কিন্তু সফল হয় নিজের মঙ্গলের জন্য।
আপনি চিন্তা করুন, কোন বিষয়গুলো ধূমপান ছাড়ার জন্য সহায়ক ছিল এবং কোনগুলো ছিল না। এগুলো বের করতে পারলে আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কিছু কিছু অবস্থা আপনার ধূমপানের আকাঙ্ক্ষা বাড়ায়। যেমন ধূমপায়ীদের সান্নিধ্যে থাকা, শরীরের ওজন বাড়া, চাপ বা স্ট্রেস, অথবা বিষণ্নতায় থাকা; তাই এগুলো মোকাবিলার জন্য চিকিত্সকের পরামর্শ নিন।

মো. ইফতেখার হাসান খান
জনস্বাস্থ্য ও ফ্যামিলি মেডিসিন বিশেষজ্ঞ
সূত্র: দৈনিক প্রথম আলো, জানুয়ারী ২৭, ২০১০

স্বাস্থ্যের বড় নির্দেশক হচ্ছে কোমরের মাপ

তেমন কিছু দরকার নেই। কাপড় মাপার জন্য দর্জি যে টেপ ব্যবহার করেন, তেমন একটি টেপ। কোমরের বেড় মেপে নিন। কোমরের মাপ বলে দেবে স্বাস্থ্যের অবস্থা। বাথরুম-স্কেলের মাপের চেয়েও বেশি গুরুত্ববহ। বেশি সঠিক নির্দেশক।
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের কোমরের মাপ বড়, তাদের রয়েছে হূদরোগ, ক্যানসার, ডায়াবেটিস, চিত্তভ্রংশ রোগের বড় ঝুঁকি।
২০০৯ সালের এপ্রিলে হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের গবেষকেরা ৪৪ হাজার সেবিকার ওপর পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর প্রকাশ করলেন, স্বাভাবিক ওজন রয়েছে এমন সেবিকা, তাদেরও হূদরোগ ও ক্যানসারে মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ হয়, যদি তাদের কোমরের বেড় বেশি হয়। অন্যান্য গবেষণায় পুরুষদের ক্ষেত্রেও তেমন ঝুঁকি দেখা যায়।
কোমরের মাপকে স্বাস্থ্যের নির্দেশক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে কয়েক বছর ধরে। তবু অনেক চিকিত্সক রোগীর দেহের ওজনকেই প্রাধান্য দিচ্ছেন এবং তাদের বডি মাস ইনডেক্স (বিএমআই) বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিএমআই হচ্ছে দেহের উচ্চতার সঙ্গে দেহের তুলনামূলক ওজনের পরিমাপ। তবে স্ত্রী-পুরুষের ওপর নানা গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, দেহের মোট ওজনের চেয়ে শরীরের কোন স্থান ভার হয়েছে বা বেশি ওজন হয়েছে, স্বাস্থ্যের বিবেচনায় তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মার্চ মাসে জর্নাল অব ক্লিনিক্যাল এপিডেমিওলজিতে প্রকাশিত এক বিশ্লেষণে দেখা যায়, হূদ্বাহ স্বাস্থ্যের সবচেয়ে দুর্বল নির্দেশক হলো বিএমআই এবং নারী-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে যাদের উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস বা উঁচু মানের কোলেস্টেরল হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি, এর ভালো সূচক হলো ‘কোমরের মাপ’।
গবেষণায় দেখা গেছে, একজন নারীর কোমরের মাপ ৩১.৫ ইঞ্চিতে উপনীত হলে স্বাস্থ্যঝুঁকিগুলো বাড়তে থাকে এবং কোমর ৩৫ ইঞ্চি বা এর বেশি হলে ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়। পুরুষের ক্ষেত্রে কোমর ৩৭ ইঞ্চি হলে ঝুঁকি বাড়তে থাকে আর ৪০ ইঞ্চি বা এর বেশি হলে ঝুঁকি খুব বেড়ে যায়।
তবে এসব পরিমাপ নেহাতই গড় মান এবং দীর্ঘদেহ বা খর্বকায় লোকের জন্য তত উপযোগী নাও হতে পারে। শিশু বা অন্যান্য আদিবাসী গোত্রে কোমরের মাপ বড় সূচক নাও হতে পারে। যেমন জাপানিদের ক্ষেত্রে পুরুষের কোমর ৩৩.৫ ইঞ্চি হলে ঝুঁকির শুরু। তবে জাপানি মেয়েদের জন্য কোমর ৩৫.৫ ইঞ্চি না হওয়া পর্যন্ত ঝুঁকি তেমন বাড়ে না। ২০০৯ সালের এপ্রিলে ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অব ওবেসিটিতে প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়েছে, বিশেষ করে তরুণদের ক্ষেত্রে সার্বিক স্বাস্থ্যঝুঁকি বিবেচনার জন্য কোমর আর উচ্চতার অনুপাত আরও ভালো নির্দেশক।
সহজভাবে বলা যায়, কোমরের মাপ হওয়া উচিত দৈহিক উচ্চতার অর্ধেকেরও কম। তবে কোমর ভারী হলেই সব সময় অস্বাস্থ্য, তাও বলা যায় না। একটি বড় উদাহরণ হলো, জাপানি সুমো কুস্তিগির। তার প্রকাণ্ড আয়তন থাকা সত্ত্বেও একজন ক্ষীণতনু অ্যাথলেটের হূত্স্বাস্থ্যের মতো সজীব হূত্স্বাস্থ্য অর্জন করে থাকতে পারে। সুমো কুস্তিগিরদের মেদ জমা হয় ত্বকের ঠিক নিচে, এই মেদভান্ডার ক্ষতিকারক নয়, শরীরের অন্তর্যন্ত্রের চারধারে যে মেদ, তা-ই হয় দেহ ও স্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ।
তবু বেশির ভাগ লোকের ক্ষেত্রে কোমরের মাপ গুরুত্বপূর্ণ। আলবাটস বিশ্ববিদ্যালয়ের ওবেসিটি রিসার্চ ও ম্যানেজমেন্টের চেয়ারম্যান আর্য এম শর্মা বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমরা জেনে আসছি, যাদের উদরের অভ্যন্তরে রয়েছে মেদের ভান্ডার, তাদের ডায়াবেটিস ও হূদরোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। যাঁরা সুমো কুস্তিগির নন, তাঁদের জন্য এই নির্দেশক খুব গুরুত্বপূর্ণ।
কোমর ভারী হলে বোঝা যায়, হূিপণ্ড, যকৃত্ ও সাধারণ পেশির চারধারে মেদ জমার আশঙ্কা এবং এতে এ সংকেত পাওয়া যায়, অন্যান্য স্বাস্থ্য-সমস্যা—যেমন ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স ও উঁচু মানের কোলেস্টেরল ও ট্রাইগ্লিসারাইড মান পরীক্ষা করা প্রয়োজন।
সামান্য কিছু ওজনও শরীর থেকে ঝরালে বড় সুফল পাওয়া যেতে পারে। ছোট একটি গবেষণায় দেখা যায়, ২০ জন খুব বেশি স্থূল রোগীকে কম ক্যালোরির খাবার দেওয়া হলো, এরা দেহের ওজনের ২০ শতাংশ ওজন হারাল। এতে তাদের ক্ষেত্রে বিএমআইয়ের ১৯ শতাংশ হ্রাস পেল, তবে কোমরের মাপ হ্রাস পেল ২৩ শতাংশ। ইমেজিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেখা গেল, হূিপণ্ডের চারপাশে মেদের স্তর ৩২ শতাংশ সংকুচিত হলো। এই প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে ২০০৯ সালের মে মাসে মেডিকেল জর্নাল অব ওবেসিটিতে।
পেটের ভেতর মেদের সঙ্গে সম্পর্কিত স্ট্রেস হরমোন। একটি গবেষণায় ১৮-২৫ বছর বয়সী ৬৭ জন মহিলা, যাঁদের কথন পরীক্ষা ও গণিত পরীক্ষার মুখোমুখি করা হলো, তাদের স্ট্রেস কী পরিমাণ হলো, তা মাপার জন্য রক্ত ও লালা পরীক্ষা করা হলো। যেসব মহিলার স্ট্রেস সবচেয়ে বেশি হলো, তাদের কোমর বেশি ভারী পাওয়া গেল; যাদের স্ট্রেস তেমন হয়নি, তাদের তুলনায়। এই প্রতিবেদনটিও প্রকাশিত হয়েছে ২০০৯ সালের মার্চে ইন্টারন্যাশনাল জর্নাল অব ওবেসিটিতে।
চিকিত্সকেরা বলেন, খাদ্যবিধি মেনে ও ব্যায়াম করে কোমর সংকুচিত করা সম্ভব। অনেকেই এতে সফল হতে সক্ষম হয় না। ডা. শর্মার মতে, কোমর ভারী হলে প্রথম লক্ষ্য হলো ওজন যাতে আর না বাড়ে সেদিকে নজর রাখা এবং কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া। ব্যায়াম ও খাদ্যের গুণগত মান ঠিক করলে হূদরোগ ও অন্যান্য সমস্যার ঝুঁকি কমানো যায়, ওজন হ্রাসে তেমন সমর্থ না হলেও তা কিছুটা সম্ভব।
ডা. শর্মা বলেন, অবশ্য কেবল ওজন নিয়ে বেশি উত্কণ্ঠিত না হয়ে স্বাস্থ্য রক্ষাই মুখ্য হওয়া উচিত। স্থূলতা মোকাবিলা মানে দেহের ওজন কমানোই কেবল নয়, স্বাস্থ্য উন্নত করাই হলো বড় কথা।

অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরীর কলম থেকে
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল, সাম্মানিক অধ্যাপক
ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।

মরণোত্তর কিডনি দান পেক্ষাপট বাংলাদেশে


বর্তমান বিশ্বে কিডনি রোগের সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। উন্নয়নশীল বিশ্বে এই হার সবচেয়ে বেশি। ফলে কিডনি অকেজো রোগীর সংখ্যাও বেড়ে যাচ্ছে। এই বৃদ্ধির হার এতটাই ব্যাপক যে, অদুর ভবিষ্যতে এটা মহামারি আকার ধারণ করতে পারে যদি এর ত্বরিত প্রতিকারের উপায় উদ্ভাবন করা না হয়।


কিডনি অকেজো হওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে, নেফ্রাইটিস, ডায়াবেটিস ও উচ্চরক্তচাপ। নেফ্রাইটিসের কারণে আমাদের দেশে শতকরা ৪০ ভাগ, ডায়াবেটিসের কারণে ২৪ ভাগ এবং উচ্চরক্তচাপের কারণে ১৫ ভাগ রোগীর কিডনি অকেজো হচ্ছে।


বর্তমানে কিডনি রোগের সংখ্যা বৃদ্ধির দরুন কিডনি অকেজো রোগীর সংখ্যাও বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য প্রয়োজন নিয়মিত ডায়ালাইসিস অথবা কিডনি সংযোজনের মতো আধুনিক চিকিৎসা।


আমাদের দেশে বর্তমানে সীমিত পর্যায়ে কিডনি সংযোজন করা হয়ে থাকে। শুধু নিকটাত্মীয়ের দান করা একটি কিডনি, কিডনি অকেজো রোগীর দেহে প্রতিস্হাপন করা হয়। কিডনি দাতার অভাবে অধিকসংখ্যক রোগীর দেহে কিডনি সংযোজন করা সম্ভব হয় না।


উন্নত বিশ্বে ৭০ ভাগ কিডনি সংগ্রহ করা হয় মৃত ব্যক্তির দেহে থেকে এবং সেই সঙ্গে লিভার, হার্ট, ফুসফুস প্যানক্রিয়ায় অকেজো অঙ্গ রোগীর দেহে প্রতিস্হাপন করা হয়। বাংলাদেশে এই প্রথম মৃত ব্যক্তির কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ নিয়ে রোগীর দেহে প্রতিস্হাপন করার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। মৃত ব্যক্তির কিডনি দানে সামাজিক বা ধর্মীয় দিক থেকেও কোনো বাধা নেই। এ লক্ষ্যে সৌদি আরবসহ অন্য মুসলিম ওলামারা ১৮৭৭ সালে এ মর্মে উপনীত হন যে, মৃত্যুর পর কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ দান করার কোনো বাধা নেই। ফলে প্রায় দুই দশক থেকে সৌদি আরবসহ অন্যান্য আরব দেশে সাফল্যজনকভাবে মৃত ব্যক্তির কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ সংযোজন করা হয়ে থাকে। সাম্প্রতিক বিএসএমএমইউতে এক গবেষণায় দেখা গেছে, শতকরা ১৬ ভাগ আইসিসিইউতে ভর্তি রোগী তাদের মৃত্যুর পর কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এতে প্রতীয়মান হয়, বাংলাদেশেও রোগীদের সচেতন করা গেলে তার মৃত্যুর পর কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ দান করতে সম্মত হবেন এবং এতে শুধু কিডনি অকেজো রোগীরাই উপকৃত হবে না বরং লিভার, হার্ট, ফুসফুস অকেজো রোগীরাও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখবেন।


বাংলাদেশে শুধু ঢাকাতেই সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে প্রায় ১০টির বেশি আইসিইউতে ১০০টি বেড রয়েছে। এখান থেকে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণসহ বহু রোগী ভর্তি হয়ে থাকে। এসব রোগীকে মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে কিডনিসহ অন্যান্য অঙ্গ ৫ থেকে ২০ ঘণ্টা সংরক্ষণ করা গেলে অকেজো অঙ্গের দেহে প্রতিস্হাপন করা সম্ভব। এর জন্য প্রয়োজন প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের ব্রেন ডেথ কমিটি গঠন এবং ঢাকার জন্য একটি পুর্ণাঙ্গ অরগান প্রকিউরম্যান কমিটি গঠন করা। এই কমিটির কাজ হবে ব্রেন ডেথ ঘোষণা করার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর নিকটাত্মীয়কে অঙ্গ দানে সম্মত করা এবং রোগীর আত্মীয়-স্বজন রাজি হলে অরগান প্রকিউর করে তা সংরক্ষণের ব্যবস্হা গ্রহণ করা এবং তা উপযুক্ত হাসপাতালে এই অঙ্গ পৌঁছে দেয়া। এ পদ্ধতি কার্যকর করা গেলে হাজার হাজার কিডনি অকেজো রোগীসহ অন্যান্য রোগী নতুন জীবন ফিরে পাবেন। সম্মেলনে এ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করা হবে এবং এর সমাধান বের করা সম্ভব হবে। বিশ্ব দ্রুত এগিয়ে চলেছে। জ্ঞান-বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সে সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে মানুষের সুস্হ দেহে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। আমরা জাতি হিসেবে পিছিয়ে থাকতে পারি না। সুতরাং আমরা যদি একটু উদ্যোগ নেই, তবে হতভাগ্য হাজার হাজার কিডনি অকেজো রোগীসহ লিভার, হার্ট এবং ফুসফুস অকেজো মৃতপ্রায় রোগীদের জীবন ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হবে।

লেখকঃ অধ্যাপক ডা. হারুন অর রশিদ
পিএইচডি, এফসিপিএস, এফআরসিপি, বিভাগীয় প্রধান, কিডনি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রেসিডেন্ট, কিডনি ফাউন্ডেশন ।


সূত্রঃ দৈনিক আমারদেশ 

দাঁতের রোগ এবং এইড্‌স

দাঁতের ডাক্তারদের চেম্বারে অপরিশোধিত যন্ত্রপাতি ব্যবহার করলেও ঘাতক ব্যাধি এইডস সংক্রমিত হতে পারে।
বর্তমান বিশ্বে সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও মরণঘাতী রোগ হচ্ছে এইডস। মুখ গহ্বরের সাথে এ রোগের সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। তাই এই রোগটি সম্পর্কে জনসাধারণের সচেতন থাকা একান্ত প্রয়োজন। এই রোগটির ভয়াবহতা সম্পর্কে সচেতন হওয়া দরকার। শুধু সাধারণ কয়েকটি নিয়ম মেনে চলতে পারলে এইডস রোগটি থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব। বিশেষত শারীরিক মিলন, সমকামিতা, অপরের ব্যবহৃত সিরিঞ্জ (যা মাদকদ্রব্য সেবনকারীরা সাধারণত গ্রহণ করে) ব্যবহার না করা, বিশেষ সম্পর্ক স্থাপনের সময় প্রতিরোধ ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে, বিনা পরীক্ষায় রক্ত গ্রহণ এবং চিকিৎসার সময় জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতি ব্যবহার থেকেই এইডস এর জীবাণূ ছড়ায়।

মুখ গহ্বরের লক্ষণসমূহ
মুখ গহ্বর প্রদাহ খুব বেশী লক্ষণীয়। শতকরা ৫৫ জন রোগীর কাপোসিজ সারকোমা বিশেষত: মুখের ভিতর তালুতেই (শতকরা ৭৭ ভাগ) লক্ষণীয়। শতকরা ৩৩ জন রোগীর মধ্যে এই টিউমারের ফলে বহুবিধ মুখ গহ্বর প্রদাহ দেখা যায়। কাপোসিজ সারকোমা সাধারনত: লক্ষ্যহীন অবস্থাতেই থাকে। শ্লেস্মা ঝিলির রঙ পরিবর্তন হয়ে নীলাভ রঙ ধারণ করে। তবে তা অনেক সময় সংবহন্তনালিকার প্রদাহ বা কালশিরার বলে ভুল হয়। মনিলিয়াসিস হচ্ছে মুখের একটি সাধারণ সুযোগ সন্ধানী জীবাণু। এইডস রোগ আক্রান্ত ব্যক্তির মুখের ভিতর আরও যে সব রোগের প্রকাশ ঘটে সেগুলো হচ্ছে শল্কসদৃশ কোষ ক্যান্সার বারকিটর লসিকা (ইৎঁশরঃরং খুসঢ়যড়সধ) ভেনিবেল আঁচিল এছাড়াও পাকন্ত্রিকের ফ্লোরা ও জীবাণুজনিত সংক্রমণ এইডস রোগীর মুখে আর একটি উল্লেখযোগ্য দিক।

অণুবীক্ষন যন্ত্রে এই সমস্ত রোগ জীবাণুর সন্ধ্যান পাওয়া গেছে। ইদানিংকালের জরিপে দেখা যায় প্রতি ৬ মাসে পৃথিবীতে এই রোগীর সংখ্যা দ্বিগুন হচ্ছে। আজ পর্যন্ত এইডস রোগীদের আরোগ্য লাভের কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা আবিষকৃত হয়নি। ফলে মৃত্যু হারও অনেক বেশি। অনাক্রমের ব্যবস্থার কার্যকারিতা একেবারে নির্জীব হয়ে যাওয়া ও দর্দম প্রকোপবান সুযোগ সন্ধানী সংক্রমনের কারণেই এইডস রোগীদের ধীরে ধীরে মৃত্যু ঘটে।

দাঁত ও মুখের চিকিৎসায় এইডস রোগীর সাবধানতা:

১. দন্ত চিকিৎসক, নার্স ও ডেন্টাল এ্যাসিসটেন্ট সকলেই গ্লোভস, মাস্ক, এপ্রোণ ও চোখ ঢাকার জন্য চশমা ব্যবহার করা প্রয়োজন।

২. স্থানীয়ভাবে অবশ করার সময় অথবা দেহে রক্ত দেবার প্রয়োজনের সময় ইনজেশনের জন্য নতুন সুঁচ বিশেষত: ডিসপোজিবল শুধুমাত্র একবার ব্যবহার করা প্রয়োজন।

৩. যন্ত্রপাতি ব্যবহারের পরে ও আগে নির্বীজক যন্ত্রে ১২১০০ সেন্টিগ্রেডে ২০ মিনিট অথবা শুকনো গরমে এ ১৬০০ সেন্টগ্রেডে দুই ঘন্টা অথবা পানিতে ১০০০ সেন্টিগ্রেডে ৩০ মিনিট রেখে জীবাণুমুক্ত করা প্রয়োজন। বীজবারক হিসেবে ইথাইল এ্যালকোহল ও ক্লোরহেক্সিডিন ব্যবহারের জন্য উপযোগী।

সুযোগ সন্ধানী প্রদাহ এবং জীবাণু সংক্রান্ত প্রদাহ:

দন্তাবরক প্রদাহ এইচ.আই.ভি প্রদাহে আক্রান্তদের মধ্যে এই রোগটি সাধারণত: লক্ষণীয়। এই সময়ে দ্রুত মাড়ির প্রদাহ ও পারিপার্শ্বিক অবস্থানের সংক্রমণ শুরু হয়। একটি ওরাল এইডস সেন্টারে (আইসিএসএফ) লক্ষ্য করা গেছে সমকামী এবং শিরাতে মাদকদ্রব্য গ্রহণকারী মহিলাদের মধ্যেই এই প্রদাহ বেশি লক্ষণীয়। এইডস আক্রান্তদের সাধারণত: মাড়ির রোগ থেকে শুরু করে তীব্র কোষ বিনষ্টকারী মাড়ির প্রদাহ হতে পারে। এইডস রোগীদের মাড়িতে একটি পাতলা লাল বর্ণের রেখা লক্ষ্য করা যেতে পারে যা মাড়ির পারিপার্শ্বিক অবস্থানে প্লাক না থাকলেও কিংবা নিয়মিত মুখের যত্ন নিলেও হতে পারে।

প্রতিরোধ:

মরণঘাতি রোগ এইডস্তএর আক্রামণ থেকে প্রতিকার ও প্রতিরোধ এর একমাত্র উপায় তিনটি পরিবারের সদস্যকে এর সংক্রমণ সম্পর্কে সচেতন করা এবং দন্ত চিকিৎসার সময় প্রতিরোধ ব্যবস্থা অবলম্বন করা যেমন্তডিসপোজিবল সুঁচ এবং জীবাণুমুক্ত যন্ত্রপাতির অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া প্রয়োজন এবং সেই সাথে দৈনন্দিন জীবনে সাবধানতা অবলম্বন করা যেমন প্রত্যেকেরই নিজ নিজ ধর্মের বিধিনিষেধ মেনে চলা। ধূমপানজনিত কারণে ফুসফুসের ক্যান্সার বন্ধ করলে এবং হেপাটাইটিস্তবি ভাইরাসজনিত কারণে লিভার ক্যান্সার, হেপাটাইটিস্তবি প্রতিষেধক টিকা নিলে যেমন প্রতিরোধ সম্ভব তেমনি এইডস রোগ প্রতিরোধে রক্ত গ্রহণ বা শল্য চিকিৎসাকালে জীবাণুমুক্ত সুঁচ ব্যবহার অথবা সঙ্গমকালে সতর্কতা অবলম্বন অত্যাবশ্যক বিশেষত: মাদকদ্রব্য গ্রহণকারীরা (যারা পেথিডিন ইনজেশন নেয়) অন্য কারো ব্যবহৃত সুঁচ গ্রহণ না করাই সর্বোৎকৃষ্ট উপায়। মুখগহ্বরে কোন ক্ষত বা ঘা দীর্ঘদিন মাড়ির প্রদাহ ইনফেকশন অবস্থান করলে বা না শুকালে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন। তবে মনে রাখা প্রয়োজন প্রতিকারের চাইতে প্রতিরোধই শ্রেয়।

ব্যক্তিত্ব ও মনের স্বাস্থ্য

কেউ যদি খুব রাশভারী হন, সহজে কারও সঙ্গে কথা বলেন না, একটা দূরত্ব মেনে চলেন—তখন আমরা চলতি ভাষায় বলে থাকি, ‘তাঁর একটা ব্যক্তিত্ব আছে’। কিন্তু মনোচিকিত্সাবিজ্ঞানের ভাষায়, ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা আলাদা। সেখানে বলা হয়েছে, ব্যক্তিত্ব হচ্ছে কোনো একজনের মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণের এমন এক স্বতন্ত্র ধরন, যা কেবল তার মধ্যেই বিদ্যমান থাকবে। এই ব্যক্তিত্ব দিয়ে তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করা যাবে এবং চারদিকের মানুষ ও পরিবেশের সঙ্গে তার মিথস্ক্রিয়ার চালিকাশক্তিও নিহিত থাকবে এই ব্যক্তিত্বের মধ্যে। গ্রিক ও রোমান সভ্যতার যুগে মাটি, বাতাস, আগুন ও পানি—এই চারটি মহাজাগতিক উপাদানের সঙ্গে তুলনা করে চার ধরনের ব্যক্তিত্বের ধরন চিহ্নিত করা হতো। ধরনগুলো হচ্ছে বিষাদময়—সর্বংসহা (মাটির মতো), প্রত্যয়ী—আশাবাদী (বাতাসের মতো), ক্রুদ্ধ—মেজাজি (আগুনের মতো) এবং উদাসীন—প্রবহমান (পানির মতো)। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ‘টাইপ’ ও ‘ট্রেইট’ অনুযায়ী ব্যক্তিত্বকে নানাভাবে ভাগ করা হয়েছে এবং ব্যক্তিত্ব নির্ণয়েরও নানা পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়েছে। জিনতত্ত্বের গবেষণায় আবিষ্কৃত হয়েছে ব্যক্তিত্ব নির্ধারণের নানা অজানা তত্ত্ব। বংশগতি, পরিবেশ এবং আরও নানা পারিপার্শ্বিক ঘটনা মানুষের ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে, ব্যক্তিত্বের প্রকাশকে প্রভাবিত করে। একজনের সঙ্গে আরেকজনের ব্যক্তিত্বের কিছু কিছু উপাদানের মিল থাকতে পারে, কিন্তু সব রকম মিল থাকে না। সহজভাবে বলা যায়, পৃথিবীতে সাড়ে ৬০০ কোটি মানুষের ব্যক্তিত্ব সাড়ে ছয় শ রকম।

ডায়াবেটিসে জানা দরকার

ডায়াবেটিসকে বলা হয় সারা জীবনের রোগ।এই রোগের কোনস্থায়ী চিকিৎসা নেই।কিছু নিয়ম শৃঙ্খলা মেনেচললে ডায়াবেটিসেআজীবন ভাল থাকা যায়।প্রতিদিনই যে কাজগুলো করা উচিত:

০ ডাক্তার বা ডায়াবেটিশিয়ান যে স্বাস্থ্যকর আহারের পরিকল্পনাটি দিয়েছেন তা প্রতিদিন অনুসরণ করে চলা উচিত।
০ সপ্তাহে অন-ত: ৫ দিন শরীরচর্চা বা ব্যায়াম করা উচিত। কোন ধরণের শরীরর্চ্চা বা ব্যায়াম উপযোগী হবে তা ডাক্তারের কাছে জেনে নেওয়া ভালো।
০ ওষুধের ব্যবস্থাপত্র দেয়া হয়ে থাকলে যথাসময়ে ওষুধ গ্রহণ করা উচিত।
০ রক্তের গ্লুকোজ মান চেক্‌ করে দেখা উচিত নির্দেশমত। প্রতিবার রক্তের গ্লুকোজ চেক করা হলে ফলাফলটি রেকর্ড বইয়ে লিপিবদ্ধ রাখা উচিত।
০ মাঝে মাঝেই দেখতে হবে পায়ে কোনও কাটা, ফাটা, ফোস্কা, ক্ষত, ফোলা বা লাল হয়ে যাওয়া আছে কিনা। পায়ের আঙ্গুলের নখেও ক্ষত আছে কিনা, দেখে নেয়া ভালো।
০ দাঁত ও মাড়ি ব্রাশ করা ও ফ্লস করা উচিত নিয়মিত।

শিশুর সাধারণ সমস্যা

প্রখ্যাত শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জাতীয় অধ্যাপক এম আর খান শিশুদের বিভিন্ন স্বাস্থ্য সমস্যা, খাদ্য, পুষ্টি সমস্যাসহ নানা বিষয়ে ইত্তেফাকের স্বাস্থ্য পাতায় নিয়মিত লিখবেন। এ সংখ্যায় লিখেছেন শিশুর সাধারণ সমস্যা নিয়ে।
শিশু স্বাস্থ্যসমস্যা – সর্দি-কাশি:
ইহা ভাইরাসজনিত অসুখ। অল্প জ্বর, মাথা ধরা, নাক দিয়ে পানি পড়া বা নাক বন্ধ হওয়া, অল্প গলা ব্যথা হওয়া এবং কিছুটা কাশি-এ রোগের লক্ষণ। এর চিকিৎসার জন্য বিশেষ কোন ওষুধ লাগে না-নাক বন্ধ হলে নাকের ড্রপ: মাথা ব্যথা বা জ্বরের জন্য প্যারাসিটামল বা এসপিরিন; কখনও কখনও এন্টিহিস্টামিন খেলেও কিছুটা উপশম পাওয়া যায়। সাধারণত: ৭ দিনের মধ্যেই এ-রোগ সেরে যায়। যদি কোন জটিলতা দেখা যায় তাহলে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হতে হবে।

মেরুদণ্ডের ব্যথায় লেজার অপারেশন

মানুষের মেরুদণ্ডে শক্ত হাড় ছাড়াও দুই হাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে নরম হাড় (ইন্টারভারটেব্রাল ডিস্ক) থাকে, যা গাড়ির স্প্রিং বা শক অ্যাবজরবারের মতো কাজ করে। সাধারণত ভারী জিনিস ওঠানো, আঘাত, শরীরের বিশেষ অবস্থায় ঝাঁকি খাওয়া, এ ছাড়া আরও নানা কারণে ডিস্কের স্থানচ্যুতি (প্রোলাপস) হয়ে সংলগ্ন মেরুরজ্জু (স্পাইনাল কর্ড) বা স্নায়ুমূল (নার্ভরুট) অথবা উভয়ের ওপরই চাপ পড়তে পারে। কোমরের (লাম্বার) ডিস্ক প্রোলাপসে রোগী তীব্র ব্যথা অনুভব করে। ফলে রোগী বসতে বা দাঁড়াতে পারে না। কোমরে উত্পন্ন স্নায়ুসমূহ (নার্স) কোমর থেকে পা পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে কোমরে ব্যথার পাশাপাশি এক পাশের বা উভয় পাশের রানে, হাঁটুতে, হাঁটুর নিচের গোছা, গোড়ালি বা পায়ের আঙুল পর্যন্ত যেকোনো জায়গায় ব্যথা অনুভূত হতে পারে।
এ ছাড়া উপরিউক্ত জায়গাগুলোতে ঝিনঝিন-শিনশিন করে, পায়ের বোধশক্তি কমে যায়, পর্যায়ক্রমে পা দুর্বল হয়ে যেতে থাকে এবং একপর্যায়ে রোগী হাঁটতে, দাঁড়াতে, এমনকি বসতেও পারে না। আবার ঘাড়ে (সারভাইক্যাল) উত্পন্ন স্নায়ুগুলো ঘাড় থেকে হাত পর্যন্ত ছড়িয়ে থাকে। কাজেই ঘাড়ের ডিস্ক প্রোলাপসে প্রাথমিক পর্যায়ে ঘাড়ের ব্যথার পাশাপাশি ডান বা বাঁ হাতে কিংবা উভয় হাতে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। লাম্বার ডিস্ক প্রোলাপসের মতো এখানেও হাত ঝিনঝিন-শিনশিন করে, হাতের বোধশক্তি কমে যায়। একপর্যায়ে হাত দুর্বল হয়ে যেতে পারে, এমনকি হাত-পা দুর্বলও হয়ে যেতে পারে।

কাটিয়ে উঠুন হতাশা

প্রতিযোগিতার দৌড়ে মানুষ হয়ে যাচ্ছে যন্ত্র। যান্ত্রিক জীবনে আনন্দ-বিনোদনের স্থান দখল করে নিয়েছে কাজের ব্যস্ততা। ব্যস্ততা আর কাজের চাপে কেউ হচ্ছেন জয়ী, আর কেউ যাচ্ছে হেরে। পরাজিত অনেকেই ডুবে যাচ্ছেন হতাশার সাগরে। শুধু কাজের ব্যস্ততা নয়, অনেকে একাকিত্বের ভাবনায় হচ্ছেন হতাশ। শত কাজের ব্যস্ততায় নিজেকে ভাবছেন একা, জড় পদার্থ। আবার অনেকে অকারণেই নিজেকে ছোট ভেবে কষ্ট পাচ্ছে। এর কোনোটিই ঠিক নয়। হতাশার পরিণতি সর্বদাই নেতিবাচক। ঝেড়ে ফেলুন হতাশা, অবসাদ।
যে ব্যক্তি যত বেশি হতাশ হবে, সে জীবন থেকে তত বেশি পিছিয়ে যাবে। হতাশা শুধু কষ্টই ডেকে আনে, কোনো সাফল্য নয়। মানুষের মস্তিষ্ক তার চিন্তা-চেতনা আর আবেগের স্থান। মস্তিষ্কই নিয়ন্ত্রণ করে যাবতীয় মানসিক বিষয়। মস্তিষ্কে রয়েছে অসংখ্য শিরা-উপশিরা আর স্নায়ু। মন খারাপ বা অতিরিক্ত দুশ্চিন্তায় স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে পড়ে। একটি স্নায়ু অপর স্নায়ুকেও প্রভাবিত করে। ফলে অপর স্নায়ুগুলো দুর্বল হয়ে যায়। এর ক্ষতিকর প্রভাব পড়ে অন্য অঙ্গগুলোর ওপর। ফলে দেহ তার স্বাভাবিক কাজকর্মের গতি হারিয়ে ফেলে। আর এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে ত্বক ও চুলের ওপর। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হলে ত্বক অকালেই বৃদ্ধ মানুষের মতো দেখায়। দেহের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলো দুর্বল হওয়ার জন্য চুলও ঝরতে শুরু করে। হারিয়ে যায় চুলের ঔজ্জ্বল্য। ত্বকে সৃষ্টি হয় অজস্র ভাঁজ এবং বলিরেখা।

অসুখ থেকে বাঁচতে

আজ বিকেলে রুমানার গায়ে হলুদ। রুমানা হলো ফারাহর বান্ধবী অনন্যার ছোট বোন। বান্ধবীর বোনের বিয়ে উপলক্ষে ফারাহর বান্ধবীদের মাঝে বেশ একটু সাজ সাজ রব পড়ে গেল। মার্কেটে বেড়ে গেল ঘোরাঘুরি, টেলিফোনে ঘন ঘন আলাপন, ‘এ্যাই শামীমা আসছে তো ? মহুয়াকেও বলেছিঃ।’ সংসার, চাকরি নানান সূত্রে বন্ধুদের ব্যস্ততায় ক্ষীণ হয়ে আসা যোগাযোগটা ঝালাই করে নেওয়া যাবে এই উপলক্ষে, উৎসাহের তাই কমতি নেই। ফারাহও বেশ পছন্দ করে একটা শাড়ি কিনেছে আজকে পরার জন্য। খোপায় পরার ফুলও আনিয়ে রেখেছে দুপুরের মধ্যে। কিন্তু হঠাৎই সকল উৎসাহে যেন ভাটা পড়ে গেল যখন ছোট ছেলে রাব্বী ছটফট করতে লাগল পেটের ব্যথায়। ক’দিন ধরেই ছেলেটার শরীরটা শুকিয়ে যাচ্ছে, খাওয়া-দাওয়ার পরিমাণ অবশ্য হ্রাস পায়নি। কৃমির আক্রমণ নয় তো ? ওদিকে বড় ছেলে রাকিব কোচিং থেকে ফিরল ‘হ্যাচ্চো হ্যাঁচ্চো’ হাচি দিতে দিতে। উদ্বিগ্ন আশঙ্কায় ফারাহ্‌ ভাবতে লাগল, এবার রাজিব (ফারাহর স্বামী) অফিস থেকে ফিরে ওষুধের বাক্সে মাথা ব্যথার ঔষুধের খোঁজে বসলেই ষোলকলা পূর্ণ হয়।

স্মৃতিশক্তি বাড়ানোর কৌশল

স্মৃতিশক্তি বাড়াবার ইচ্ছে কমবেশি আমাদের সবার মধ্যেই আছে। আমরা চাই সব কিছু যেন আমাদের মনে থাকে। বাস্তবে সেটা সম্ভব নয়। কিন্তু মনে রাখার পরিমাণ বাড়ানো সম্ভব। এ জন্য আপনাকে কিছু নিয়ম-কানুন মানতে হবে। যেমন : ১. লক্ষ্য করুন এবং নোট নিন, ২. তথ্য সুশৃঙ্খলিত করুন, ৩. ডায়েরি ব্যবহার করুন, ৪. শরীর ফিট রাখুন, ৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান, ৬. মগজ ব্যায়াম করুন, ৭. স্মৃতি সহায়ক, ৮. অন্যান্য সহায়ক, ৯. মনে রাখবেন কেউই স্বয়ংসম্পূর্ণ নয়।
১. লক্ষ্য করুন ও নোট নিন : কোন কিছুকে গুরুত্ব দিয়ে না শুনলে বা না দেখলে তা আপনার মনে থাকবে না। সুতরাং নিজেকে বিষয়টি সম্পর্কে সজাগ ও সচেতন রেখে গুরুত্ব সহকারে মনোযোগ দিন। যেমন- এইমাত্র যার সঙ্গে আপনার পরিচয় হলো তার নামটি যদি আপনি মনে রাখতে চান তাহলে তা কয়েকবার নিজে নিজে আওড়ান এবং মনের ঠিক কোথায় নামটি রাখছেন খেয়াল করুন। টুকে নেয়াটা খুব ভাল অভ্যাস। প্রয়োজনীয় জিনিস টুকে নিলে তা মনে থাকে ভাল।
২. সুশৃঙ্খল হোন : স্বভাবের দিক দিয়ে গোছানো হলে অনেক কিছুই সহজে মনে থাকে। নির্দিষ্ট জিনিস সব সময় নির্দিষ্ট জায়গায় রাখলে প্রয়োজনের সময় হাতড়ে বেড়াতে হয় না।
৩. ডায়েরি ব্যবহার করুন : ডায়েরিতে তারিখ অনুযায়ী করণীয়গুলো লিখে রাখলে কোন কাজ বাদ পড়ার সম্ভাবনা কম। তবে এ জন্য মনে পড়ামাত্র কাজটির কথা ডায়েরির নির্দিষ্ট পাতায় লিখতে হবে আর প্রতিদিন ডায়েরি দেখতে হবে। সবচেয়ে ভাল হয় যদি প্রতিরাতে আগামীকালের কাজগুলো দেখে নেন।
৪. শরীর ফিট রাখুন : শরীর সুস্থ থাকলে মনও সুস্থ থাকে। তাই নিয়মিত ব্যায়াম করুন, পরিমিত আহার করুন, সিগারেট ছেড়ে দিন। কানে শুনতে, চোখে দেখতে অসুবিধা থাকলে ডাক্তার দেখিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিন, এতে অন্যে কি বলছে কি করছে তা আপনি আর মিস করবেন না। ঘুমের বড়ি না খাওয়াই ভাল। আপনি আরও একটু এ্যালার্ট থাকবেন তাহলে।
৫. নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করান : নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানোর ব্যাপারটা আমাদের অভ্যাসের বাইরে। ফলে রোগ গভীর না হওয়া পর্যন্ত আমরা তার উপস্থিতি টের পাই না। প্রত্যেকের উচিত প্রতিবছর ডাক্তারকে দিয়ে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো। এতে উচ্চরক্তচাপ, ডায়াবেটিস, চোখের বা কানের সমস্যা সহজেই ধরা পড়বে। আপনার বিষণ্নতা থাকলে তাও ধরা পড়বে। বিষণ্নতাবিরোধী ওষুধ সেবন করলে বিষণ্নতা যত কমবে আপনার স্মৃতিশক্তি তত বাড়বে।
৬. মগজকে ব্যবহার করুন : শারীরিক কাজ না করলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। কেউ যদি কয়েক সপ্তাহ বিছানায় শুধু শুয়েই থাকে তার পা সরু হয়ে যাবে, মাংসপেশীতে টান পড়বে, হাঁটতে অসুবিধা হবে। তেমনি কার্যক্ষমতা কমে যায়। সুশিক্ষিত বুদ্ধিমান ব্যক্তি যাঁরা নিয়মিত বুদ্ধির চর্চা করেন বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের স্মৃতি হ্রাস তুলনামূলকভাবে কম হয়। তাই ভাল স্মৃতিশক্তি পেতে চাইলে নিয়মিত পড়ুন, শিখুন ও সমস্যা সমাধানে অংশগ্রহণ করুন। অলসভাবে বসে থাকলে স্মৃতিশক্তি ভোঁতা হয়ে যায়।
৭. স্মৃতি সহায়ক : মনে রাখার কিছু চমৎকার কৌশল আছে, যেমন- ‘আসহবেনীকলা’-রংধনুর সাত রঙের নাম মনে রাখতে সাহায্য করে। ইংরেজিতে লেফটেন্যান্ট বানানটা মনে রাখা আপনার জন্য খুব কষ্টকর হলে মনে রাখুন- ‘মিথ্যা তুমি দশ পিঁপড়া’- শব্দগুলোর ইংরেজি লিখে নিন, বানান পেয়ে গেলেন। মনে রাখার জন্য কল্পনা শক্তির ব্যবহার খুব জরুরি। যে কল্পনাশক্তিকে যত চমৎকারভাবে ব্যবহার করতে পারবে তার মনে থাকবে তত বেশি। বিশেষত ভারতীয় বিজ্ঞাপনগুলো লক্ষ্য করলে দেখবেন পণ্যের বিজ্ঞাপনে কি অদ্ভুত সব কল্পনা ব্যবহার করা হচ্ছে। এসবই মনে রাখার পক্ষে অত্যন্ত উপকারী।
৮. অন্যান্য সহায়ক : দিন তারিখ মনে রাখার জন্য আমরা ক্যালেন্ডার-ঘড়ি ব্যবহার করছি। ঘুম থেকে ওঠার জন্য এলার্ম ঘড়ি ব্যবহার করছি। আজকাল মোবাইল ফোন ও অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক যন্ত্রে রিমাইন্ডার নামে একটা ব্যবস্থা আছে- যা আপনাকে কাজের কথাটা মনে করিয়ে দেবে। যে জিনিসটা নিয়ে বাইরে যেতে হবে তা দরজার মুখে রাখুন, ওষুধটা বেসিনের ওপরে তাকে রাখুন- প্রয়োজনের জিনিসগুলো আগেই গুছিয়ে রাখুন, কোন জিনিস ফেলে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবে না।
৯. কেউই খুঁতবিহীন নয় : অধিকাংশ মানুষ যারা নিজেদের স্মরণশক্তি নিয়ে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নন তারাও যে সব কিছুই মনে রাখতে পারেন, তা নয়। যুবকদের মধ্যে যারা ভুলে যায় তারা হয়ত অজুহাত দেখায়- ‘প্রেমে পড়েছি, মন অন্য দিকে নেই’, ‘পড়াশোনা নিয়ে খুব ব্যস্ত’ ইত্যাদি ইত্যাদি। বয়স্করা ভাবেন ‘আমার কি স্মৃতিভ্রংশ দেখা দিল?’ আসলে এরা সবাই স্বাভাবিক। মানুষ একটু আধটু ভুলবেই। যতক্ষণ পর্যন্ত এটা সাধারণ কাজকর্মে ব্যাঘাত না ঘটাচ্ছে, ততক্ষণ দুশ্চিন্তার কিছু নেই।
সত্যি যদি মনে ভুলে যাওয়া ব্যাপারটা আপনাকে বেশ ভোগায় তা হলে ডাক্তারের পরামর্শ নিন। সে ক্ষেত্রে যত দ্রুত চিকিৎসা শুরু করবেন ততই ভাল।

আলসারেটিভ কোলাইটিস কখন অপারেশন প্রয়োজন

পূর্বে ইউরোপ ও আমেরিকাতে এ রোগ দেখা গেলেও উপমহাদেশের জনগণের মধ্যে ছিল কদাচিত। তবে বর্তমানে পশ্চিমা দেশগুলোর খাদ্যাভাস ও সংস্কৃতি অনুকরণের ফলে আমাদের দেশের জনগণের মধ্যেও দেখা যাচ্ছে আলসারেটিভ কোলাইটিস। এ রোগটি সাধারণত ২০ থেকে ৪০ বছর বয়সের মাঝামাঝি লোকজনের মধ্যেই বেশি দেখা যায়। আলসারেটিভ কোলাইটিস ঠিক কাদের হয় তার কারণ সটিকভাবে জানা যায়নি। তবে মামাত, চাচাত, খালাত ও পুফাত ভাই-বোনদের সন্তানদের মধ্যে এ রোগ দেখা দিতে পারে। তবে কেউ কেউ মনে করেন কোলনের অন্ত্রগাত্রের আবরণ যদি দুর্বল হয় তবে এ রোগ হতে পারে। কেউ যদি খুবই দুশ্চিন্তায় ভোগে, দুধ কিংবা দুগ্ধজাতীয় খাবার খায় অথবা আমাশয়ে ভোগে তবে আলসারেটিভ কোলাইটিসের উপসর্গগুলো বারবার দেখা দিতে পারে। 

বিয়ের আগে দাঁতের যত্ন

বিয়ে মানুষের জীবনে একটি নতুন ধাপ। বিয়ে মানে দুটি মনের ব্যবধানকে শূন্যে নিয়ে এসে সামাজিকভাবে একে অপরকে স্বামী স্ত্রী হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা।
আগের দিন গুরুজনেরা কনে পছন্দ করতেন হাঁটা-চলা পড়াশোনা (কলমা জানা) গায়ের রঙ দেখার মাধ্যমে। দিন পাল্টেছে। এখন পাত্র-পাত্রীর শিক্ষাগত যোগ্যতাই এখন বেশি প্রাধান্য দেয়। তারপরও মুখাবয়ব যত সুন্দরই হোক না কেন হাসতে বা কথা বলতে গিয়ে যদি দেখা যায় বর/কনের ভাঙ্গা দাঁত, ফাঁকা দাঁত, মুখে দূর্গন্ধ, কালো দাগযুক্ত দাঁত ইত্যাদি তাহলে উভয়ের পছন্দের মাঝে ডাটা পড়তেই পারে। এজন্য বিয়ের আগে বর-কনের শারিরীক সুস্থতার পাশাপাশি মুখের সুস্বাস্থ্যও নিশ্চিত করতে হবে।
যেমন বরের ক্ষেত্রে যে সমস্যাগুলো দেখায়-

সুস্থ থাকতে নিয়মিত ব্যায়াম করুন


ব্যায়াম বা শরীর চর্চা প্রতিটি পূর্ণ বয়স্ক মানুষের করা বাঞ্জনীয়। ব্যায়াম শুধু শরীরকে সচল ও ফিট রাখে তাই নয়, ব্যায়ামের মাধ্যমে শরীরের খারাপ চর্বি বা ব্যাড কোলেষ্টেরলের মাত্রা কমে এবং ভালো চর্বি বা গুড কোলেষ্টেরল এইচডিএল-এর মাত্রা বাড়ে। পাশাপাশি ব্যায়াম করলে শরীরের রক্ত সঞ্চালন ত্বরান্বিত হয় এবং দ্রুত রক্ত চলাচলের কারণে হার্টের রক্তনালীতে চর্বি জমতে পারেনা। ফলে হার্টে ব্লক তৈরীও হতে পারে না, পাশাপাশি যাদের হার্টের রক্তনালীতে ব্লক বা খানিকটা চর্বি জমেছে সেক্ষেত্রেও ব্যায়াম রক্তনালীতে অতিরিক্ত চর্বি জমতে দেয়না। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করলে শরীর মুটিয়ে যাওয়ার হাত থেকেও রক্ষা পায়। এমনকি যারা নিয়মিত ব্যায়াম করেন তাদের মানসিক চাপ কমে, প্রতিদিন না হলেও সপ্তাহে অন-ত: ৫দিন ব্যায়াম করা উচিত। ব্যায়াম বলতে শরীর চর্চা, সাতার, সাইক্লিং, ট্রেডমিল, হাঁটা, জগিং ইত্যাদি বুঝায়।

মানুষের আহার গ্রহন ও ডায়াবেটিস



ফার্স্ট ফুড নয়, প্রচুর তাজা ফল সবজি খান। দৈনন্দিন জীবনযাপনে এরকম ছোটখাট পরিবর্তন আয়ু যেমন বাড়াবে তেমনি ডায়াবেটিসের মত ক্রনিক রোগ ও এর জটিলতা থেকেও বাচাঁবে।


স্বাস্থ্যকর খাবারের দিকে একদিন মন যাবেই। ভোরে উঠে এক গ্লাস কোমল পানীয় পান না করে যদি একগ্লাস পানি পান করা যায় তাহলে একটি স্বাস্থ্যকর পানীয় যোগ হলো দৈনিক আহারের সঙ্গে। কালক্রমে এরকম দুএকটি ছোটখাট পরিবর্তন যোগ হতে হতে একদিন স্বাস্থ্যকর আহার হবে গোটা দিনের জন্য। মনও তখন স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে চাইবে। পেষ্ট্রিশপে গিয়ে কেক, পেষ্ট্রি খাবার জন্য যে আগ্রহ ছিলো একদিন তা থাকবেনা। মন ছুটে যাবে কাঁচাবাজারে, তাজা ফল ও সব্‌জি কেনার জন্য।


লিভারের যত অসুখ

লিভার শরীরের সর্ববৃহৎ অঙ্গ। আকৃতিতে যেমন বৃহৎ, প্রয়োজনীয়তার দিক থেকেও এটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। শরীরকেসুখে রাখতে দরকার সুস্থ লিভার। অসুস্থ বা রোগাক্রান- লিভার আমাদের জীবনে বয়ে নিয়ে আসে দুঃখ, কষ্ট এমনকি অকালে প্রস্থান। অন্য যে কোন যন্ত্র বা মেশিনের মত আমাদের দেহ যন্ত্রও চলে শক্তির সাহায্যে। এ শক্তি আসে খাদ্য থেকে। আমরা যেরূপে খাবার খাই তা থেকে সরাসরি শক্তি উৎপন্ন হতে পারে না। জটিল খাবার লিভারে প্রক্রিয়াজাত হয়ে শক্তি উৎপাদনের উপযোগী হয়ে জমা থাকে এবং প্রয়োজন মাফিক শরীরের কোষে কোষে পৌছে শক্তি উৎপাদন করে। তাই লিভারকে বলা হয় শরীরের পাওয়ার হাউজ। শুধু তাই নয়, শরীরে উৎপন্ন বিভিন্ন দুষিত পদার্থ লিভার বিশুদ্ধ করে এবং পরবর্তীতে শরীর থেকে বের করার ব্যবস্থা করে। অনিচ্ছাকৃত বা ইচ্ছাকৃত ভাবে শরীরে কোন বিষাক্ত পদার্থ প্রবেশ করলে লিভার সেটিকে বিষমুক্ত করে। বিভিন্ন ধরনের প্রোটিন জাতীয় পদার্থ তৈরী করে যা শরীরের জন্য অপরিহার্য।