কেউ যদি খুব রাশভারী হন, সহজে কারও সঙ্গে কথা বলেন না, একটা দূরত্ব মেনে চলেন—তখন আমরা চলতি ভাষায় বলে থাকি, ‘তাঁর একটা ব্যক্তিত্ব আছে’। কিন্তু মনোচিকিত্সাবিজ্ঞানের ভাষায়, ব্যক্তিত্বের সংজ্ঞা আলাদা। সেখানে বলা হয়েছে, ব্যক্তিত্ব হচ্ছে কোনো একজনের মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণের এমন এক স্বতন্ত্র ধরন, যা কেবল তার মধ্যেই বিদ্যমান থাকবে। এই ব্যক্তিত্ব দিয়ে তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করা যাবে এবং চারদিকের মানুষ ও পরিবেশের সঙ্গে তার মিথস্ক্রিয়ার চালিকাশক্তিও নিহিত থাকবে এই ব্যক্তিত্বের মধ্যে। গ্রিক ও রোমান সভ্যতার যুগে মাটি, বাতাস, আগুন ও পানি—এই চারটি মহাজাগতিক উপাদানের সঙ্গে তুলনা করে চার ধরনের ব্যক্তিত্বের ধরন চিহ্নিত করা হতো। ধরনগুলো হচ্ছে বিষাদময়—সর্বংসহা (মাটির মতো), প্রত্যয়ী—আশাবাদী (বাতাসের মতো), ক্রুদ্ধ—মেজাজি (আগুনের মতো) এবং উদাসীন—প্রবহমান (পানির মতো)। পরবর্তী সময়ে বিজ্ঞানের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে ‘টাইপ’ ও ‘ট্রেইট’ অনুযায়ী ব্যক্তিত্বকে নানাভাবে ভাগ করা হয়েছে এবং ব্যক্তিত্ব নির্ণয়েরও নানা পদ্ধতি প্রবর্তিত হয়েছে। জিনতত্ত্বের গবেষণায় আবিষ্কৃত হয়েছে ব্যক্তিত্ব নির্ধারণের নানা অজানা তত্ত্ব। বংশগতি, পরিবেশ এবং আরও নানা পারিপার্শ্বিক ঘটনা মানুষের ব্যক্তিত্বকে নিয়ন্ত্রণ করে, ব্যক্তিত্বের প্রকাশকে প্রভাবিত করে। একজনের সঙ্গে আরেকজনের ব্যক্তিত্বের কিছু কিছু উপাদানের মিল থাকতে পারে, কিন্তু সব রকম মিল থাকে না। সহজভাবে বলা যায়, পৃথিবীতে সাড়ে ৬০০ কোটি মানুষের ব্যক্তিত্ব সাড়ে ছয় শ রকম।
একজনের ব্যক্তিত্ব যেমনই হোক না কেন, তা যদি তার নিজের কোনো ক্ষতির কারণ না হয়; যদি অন্যের, সমাজের বা নিজের সংস্কৃতির কোনো ক্ষতির কারণ না হয় বা তার নিজের জীবন ও জীবিকার ওপর কোনো খারাপ প্রভাব না ফেলে, তবে আমরা বলতে পারি, তার ব্যক্তিত্বের ধরন স্বাভাবিক ও সুস্থ। কিন্তু কারও মানসিক প্রক্রিয়া ও আচরণ (অন্য কথায় তার ব্যক্তিত্ব) যদি এমনটা হয় যে সেগুলো তার নিজের, অন্যের এবং সমাজের জন্য পীড়াদায়ক বা তার স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডের অন্তরায় হয়, তখন আমরা বলতে পারি, তার ব্যক্তিত্বের সমস্যা রয়েছে। গবেষণায় দেখা গেছে, পৃথিবীতে মোট জনসংখ্যার ১০ থেকে ২০ শতাংশের মধ্যে ব্যক্তিত্বের সমস্যা বা ‘পারসোনালিটি ডিজঅর্ডার’ রয়েছে। আর কেবল মানসিক রোগীদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের সমস্যার হার প্রায় ৫০ শতাংশ। যাদের মধ্যে ব্যক্তিত্বের সমস্যা রয়েছে, তাদের মাদকাসক্তি, হত্যা, আত্মহত্যা, অতি উদ্বিগ্নতা, আবেগজনিত রোগ, নানা ধরনের অপরাধ ইত্যাদির সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি।
ব্যক্তিত্বের সমস্যাগুলোকে প্রথমত তিনটি ভাগে ভাগ করা যায়। এগুলোকে বলা হয় ‘ক্লাস্টার’। ক্লাস্টার ‘এ’তে রয়েছে প্যারানয়েড, সিজয়েড ও সিজোটাইপাল ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যা, ক্লাস্টার ‘বি’তে রয়েছে অ্যান্টিসোশ্যাল, বর্ডারলাইন, হিস্ট্রিয়োনিক ও নার্সিসিস্টিক ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যা এবং ক্লাস্টার ‘সি’তে আছে অবসেসিভ-কমপালসিভ, এভয়ডেন্ট ও ডিপেনডেন্ট ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যা।
প্যারানয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এরা সাধারণত অহেতুক সন্দেহপ্রবণ, সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে চায় না, পরশ্রীকাতর, অনুভূতিপ্রবণ, প্রায়ই বিরক্ত-অসন্তুষ্ট থাকে। এরা নিজেকে সব সময় অন্যদের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে এবং প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে থাকে।
সিজয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এদের আবেগ থাকে কম, একা থাকতে পছন্দ করে, আনন্দের অনুভূতি কম থাকে, তবে এদের অন্তর্দৃষ্টি অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে।
সিজোটাইপাল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এ ধরনের ব্যক্তিত্বের মানুষ সামাজিকতা এড়িয়ে চলে, সামাজিক উদ্বিগ্নতায় ভোগে। অনেক সময় তারা মনে করে, তারা অন্যদের মনের কথা বুঝতে পারে। মাঝেমধ্যে তারা মনে করে, অন্যরা সব সময় তাকে নিয়ে সমালোচনা করছে। তাদের কথোপকথনে অসামঞ্জস্যতা থাকতে পারে এবং তারা বেশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে।
অ্যান্টিসোশ্যাল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এদের আচরণ হয় নির্মম। অন্যের প্রতি এদের কোনো অনুভূতি থাকে না। এরা দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়, হঠাত্ করে রেগে যায়, মেজাজ হয় খিটখিটে। অপরাধ করলেও এদের মধ্যে কোনো অপরাধবোধ বা অনুতাপ থাকে না এবং তারা পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। ছোট থেকে বড় নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে তারা জড়িয়ে যেতে পারে।
বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এরা অস্তিত্বের সংকটে ভোগে, কারও সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না। এদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ কেমন হবে, তা আগে থেকে ধারণা করা যায় না। এরা হঠকারী আচরণ করে, নিজের ক্ষতি নিজে করে ফেলতে পারে এবং হাত-পা ধারালো অস্ত্র বা ব্লেড দিয়ে কাটে, দেয়ালে মাথা ঠুকে ইত্যাদি।
হিস্ট্রিয়োনিক পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এরা নাটুকেপনা করতে পছন্দ করে, অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা এদের আছে। তবে এ ধরনের মানুষের অনুভূতিগুলো খুব একটা গভীর নয়। শারীরিক সৌন্দর্যকে এরা বেশি গুরুত্ব দেয়। অন্যের মনোযোগ পেতে এরা ভালোবাসে।
নার্সিসিস্টিক পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, গ্রিক দেবী নার্সিসিসের মতো এরা নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। নিজেকে এরা অনেক বড় মনে করে এবং অন্যদের চেয়ে আলাদা ভাবে। নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে এরা অনেক উচ্চ ধারণা পোষণ করে। এরা অন্যের প্রশংসা চায়। কিছুটা স্বার্থপর ও হিংসুটে স্বভাবের হয়ে থাকে। অন্যের মতামতের মূল্য এদের কাছে কম।
এভয়ডেন্ট পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এরা সব সময় টেনশনে ভোগে। সমাজের অন্যদের চেয়ে এরা নিজেকে ছোট মনে করে। হীনম্মন্যতা থাকে এদের মধ্যে। সব সময় ভাবে, অন্যরা তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। সামাজিক কর্মকাণ্ডে এরা সাধারণত নিজেকে যুক্ত করে না এবং ঝুঁকি নিতে ভয় পায়।
ডিপেনডেন্ট পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এ ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্তরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। নিজে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, এমনকি নিজের চাহিদা বা প্রয়োজনের কথাও প্রকাশ করতে পারে না। নিজের ঘাড়ে কোনো দায়িত্ব এসে পড়তে পারে, এটা নিয়ে এরা সন্ত্রস্ত থাকে।
অবসেসিভ-কম্পালসিভ পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: নিয়মনীতি কঠোরভাবে মেনে চলতে চায় এ ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্তরা। সবকিছুর মধ্যে পারফেকশন খুঁজে বেড়ায় এরা এবং স্বভাবটা হয়ে যায় খুঁতখুঁতে। এরা অপেক্ষাকৃত দৃঢ়চেতা হয়, বেশি কাজ করতে পছন্দ করে। সতর্ক থাকা অন্যকে সন্দেহ করা এদের আরেক বৈশিষ্ট্য। সে চায় অন্যরা তার মত অনুযায়ী চলুক।
এই হচ্ছে মোটামুটি ব্যক্তিত্ব ও তার সমস্যার ধরন। পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারের চিকিত্সায় ওষুধ এবং সাইকোথেরাপি দুয়েরই ভূমিকা রয়েছে। সমস্যার ধরন বুঝে চিকিত্সাও ভিন্ন ভিন্ন। তবে সবার আগে প্রয়োজন পরিবার ও চারপাশের মানুষের সচেতনতা এবং এটা মেনে নেওয়া যে পারসোনালিটির সমস্যা একটি মানসিক রোগ। অনেক সময় এ ধরনের রোগীদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে সুচিকিত্সার বদলে তাদের প্রতি বৈরী আচরণ করতে দেখা যায়। আবার কখনো দেখা যায়, রোগীর মা-বাবা বা পরিবারের স্বজনেরা এ ধরনের সমস্যাকে কোনো রোগ হিসেবে মানতে রাজি হন না। তাই সর্বপ্রথম মেনে নিতে হবে, অন্য মানসিক রোগের মতো এটিও একটি রোগ এবং এর বিজ্ঞানসম্মত চিকিত্সা রয়েছে। লক্ষণ কমাতে প্রয়োজনে ওষুধ দেওয়া হয় আর রোগীর অভিযোজনের ক্ষমতা বাড়াতে এবং তার ব্যক্তিত্বকে স্বাভাবিকের আওতায় রাখার জন্য দরকার সাইকোথেরাপির। সাপোর্টিভ সাইকোথেরাপি, প্রবলেম সলভিং কাউন্সিলিং, সাইকোডাইনামিক কাউন্সিলিং, ডাইনামিক সাইকোথেরাপি, কগনিটিভ থেরাপি, কগনিটিভ অ্যানালাইটিক থেরাপি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সাইকোথেরাপি সমস্যার ধরন বুঝে ব্যবহূত হয়। প্রয়োজনবোধে পরিবারের সদস্য, কর্মস্থলের সহকর্মীসহ রোগীর চারপাশের মানুষজনকেও চিকিত্সার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের সহায়তা নিয়ে এদের উপযুক্ত চিকিত্সার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।
মনে রাখতে হবে, ব্যক্তিত্বের সমস্যায় যারা আক্রান্ত, তারা কোনো অপরাধী নয়, তাদের সুচিকিত্সার আওতায় আনা সবার দায়িত্ব।
সিজয়েড পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এদের আবেগ থাকে কম, একা থাকতে পছন্দ করে, আনন্দের অনুভূতি কম থাকে, তবে এদের অন্তর্দৃষ্টি অন্যদের চেয়ে বেশি থাকে।
সিজোটাইপাল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এ ধরনের ব্যক্তিত্বের মানুষ সামাজিকতা এড়িয়ে চলে, সামাজিক উদ্বিগ্নতায় ভোগে। অনেক সময় তারা মনে করে, তারা অন্যদের মনের কথা বুঝতে পারে। মাঝেমধ্যে তারা মনে করে, অন্যরা সব সময় তাকে নিয়ে সমালোচনা করছে। তাদের কথোপকথনে অসামঞ্জস্যতা থাকতে পারে এবং তারা বেশ আত্মকেন্দ্রিক হয়ে থাকে।
অ্যান্টিসোশ্যাল পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এদের আচরণ হয় নির্মম। অন্যের প্রতি এদের কোনো অনুভূতি থাকে না। এরা দায়িত্বজ্ঞানহীন হয়, হঠাত্ করে রেগে যায়, মেজাজ হয় খিটখিটে। অপরাধ করলেও এদের মধ্যে কোনো অপরাধবোধ বা অনুতাপ থাকে না এবং তারা পারিবারিক ও সামাজিক দায়িত্ব এড়িয়ে চলতে পছন্দ করে। ছোট থেকে বড় নানা ধরনের অপরাধের সঙ্গে তারা জড়িয়ে যেতে পারে।
বর্ডারলাইন পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এরা অস্তিত্বের সংকটে ভোগে, কারও সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী সম্পর্ক বজায় রাখতে পারে না। এদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ কেমন হবে, তা আগে থেকে ধারণা করা যায় না। এরা হঠকারী আচরণ করে, নিজের ক্ষতি নিজে করে ফেলতে পারে এবং হাত-পা ধারালো অস্ত্র বা ব্লেড দিয়ে কাটে, দেয়ালে মাথা ঠুকে ইত্যাদি।
হিস্ট্রিয়োনিক পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এরা নাটুকেপনা করতে পছন্দ করে, অন্যকে প্রভাবিত করার ক্ষমতা এদের আছে। তবে এ ধরনের মানুষের অনুভূতিগুলো খুব একটা গভীর নয়। শারীরিক সৌন্দর্যকে এরা বেশি গুরুত্ব দেয়। অন্যের মনোযোগ পেতে এরা ভালোবাসে।
নার্সিসিস্টিক পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে, গ্রিক দেবী নার্সিসিসের মতো এরা নিজেকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে। নিজেকে এরা অনেক বড় মনে করে এবং অন্যদের চেয়ে আলাদা ভাবে। নিজেদের ক্ষমতা সম্পর্কে এরা অনেক উচ্চ ধারণা পোষণ করে। এরা অন্যের প্রশংসা চায়। কিছুটা স্বার্থপর ও হিংসুটে স্বভাবের হয়ে থাকে। অন্যের মতামতের মূল্য এদের কাছে কম।
এভয়ডেন্ট পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এরা সব সময় টেনশনে ভোগে। সমাজের অন্যদের চেয়ে এরা নিজেকে ছোট মনে করে। হীনম্মন্যতা থাকে এদের মধ্যে। সব সময় ভাবে, অন্যরা তাদের প্রত্যাখ্যান করবে। সামাজিক কর্মকাণ্ডে এরা সাধারণত নিজেকে যুক্ত করে না এবং ঝুঁকি নিতে ভয় পায়।
ডিপেনডেন্ট পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: এ ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্তরা অন্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। নিজে নিজে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না, এমনকি নিজের চাহিদা বা প্রয়োজনের কথাও প্রকাশ করতে পারে না। নিজের ঘাড়ে কোনো দায়িত্ব এসে পড়তে পারে, এটা নিয়ে এরা সন্ত্রস্ত থাকে।
অবসেসিভ-কম্পালসিভ পারসোনালিটি ডিসঅর্ডার: নিয়মনীতি কঠোরভাবে মেনে চলতে চায় এ ধরনের ব্যক্তিত্বের সমস্যায় আক্রান্তরা। সবকিছুর মধ্যে পারফেকশন খুঁজে বেড়ায় এরা এবং স্বভাবটা হয়ে যায় খুঁতখুঁতে। এরা অপেক্ষাকৃত দৃঢ়চেতা হয়, বেশি কাজ করতে পছন্দ করে। সতর্ক থাকা অন্যকে সন্দেহ করা এদের আরেক বৈশিষ্ট্য। সে চায় অন্যরা তার মত অনুযায়ী চলুক।
এই হচ্ছে মোটামুটি ব্যক্তিত্ব ও তার সমস্যার ধরন। পারসোনালিটি ডিসঅর্ডারের চিকিত্সায় ওষুধ এবং সাইকোথেরাপি দুয়েরই ভূমিকা রয়েছে। সমস্যার ধরন বুঝে চিকিত্সাও ভিন্ন ভিন্ন। তবে সবার আগে প্রয়োজন পরিবার ও চারপাশের মানুষের সচেতনতা এবং এটা মেনে নেওয়া যে পারসোনালিটির সমস্যা একটি মানসিক রোগ। অনেক সময় এ ধরনের রোগীদের অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করে সুচিকিত্সার বদলে তাদের প্রতি বৈরী আচরণ করতে দেখা যায়। আবার কখনো দেখা যায়, রোগীর মা-বাবা বা পরিবারের স্বজনেরা এ ধরনের সমস্যাকে কোনো রোগ হিসেবে মানতে রাজি হন না। তাই সর্বপ্রথম মেনে নিতে হবে, অন্য মানসিক রোগের মতো এটিও একটি রোগ এবং এর বিজ্ঞানসম্মত চিকিত্সা রয়েছে। লক্ষণ কমাতে প্রয়োজনে ওষুধ দেওয়া হয় আর রোগীর অভিযোজনের ক্ষমতা বাড়াতে এবং তার ব্যক্তিত্বকে স্বাভাবিকের আওতায় রাখার জন্য দরকার সাইকোথেরাপির। সাপোর্টিভ সাইকোথেরাপি, প্রবলেম সলভিং কাউন্সিলিং, সাইকোডাইনামিক কাউন্সিলিং, ডাইনামিক সাইকোথেরাপি, কগনিটিভ থেরাপি, কগনিটিভ অ্যানালাইটিক থেরাপি ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সাইকোথেরাপি সমস্যার ধরন বুঝে ব্যবহূত হয়। প্রয়োজনবোধে পরিবারের সদস্য, কর্মস্থলের সহকর্মীসহ রোগীর চারপাশের মানুষজনকেও চিকিত্সার সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে হয়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞের তত্ত্বাবধানে এবং ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের সহায়তা নিয়ে এদের উপযুক্ত চিকিত্সার পরিকল্পনা করা প্রয়োজন।
মনে রাখতে হবে, ব্যক্তিত্বের সমস্যায় যারা আক্রান্ত, তারা কোনো অপরাধী নয়, তাদের সুচিকিত্সার আওতায় আনা সবার দায়িত্ব।
0 comments:
Post a Comment