লক্ষণ ও উপসর্গ
১. ভাঙ্গা হার - বিশেষত মেরুদণ্ডে, নিতম্বে, পাঁজর কিংবা কব্জিতে; কখনও কখনও এটাই এই রোগের প্রথম লক্ষণ|
২. কাঁধ বেঁকে যেতে যেতে থেমে যাওয়া; এবং উচ্চতার হন্সাস হওয়া (সাধারণত বয়স ৭০ এর উপরে গেলে।)
৩. পিঠে তীব্র ব্যথা হওয়া|
কী করা উচিত
১. সমস্যাটি পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিতভাবে জানুন।
২. পিঠে বা দেহের পেছনে ব্যথা হলে ব্যথা-নিরাময়কারী কোন ওষুধ সেবন করুন।
৩. প্রতিদিন নিয়মিত শরীর চর্চা করুন, সাধারণ ব্যায়াম যেমন প্রতিদিন হাটার অভ্যেস করুন, কিন্তু একই সাথে মেরুদণ্ডে চাপ পরে এরকম কঠিন কোন ব্যায়াম বা শরীর চর্চা এড়িয়ে চলুন।
৪. দেহের পতন রোধ করুন: সিড়ির পাশে দেয়ালে হ্যান্ড রেইলের ব্যবþহা রাখুন, বাথরুমে সম্ভাব্য পতনের ঝুঁকি রোধে দেয়ালে কোন ধরার স্তম্ভ রাখুন। যেসব ঘরের শান বা ফ্লোর পিচ্ছিল সেগুলো রাবারের ম্যাট কিংবা কার্পেট দিয়ে ঢেকে দিন। রাতের বেলায় মৃদু আলোর বাল্ব জ্বালিয়ে রাখুন এবং অন্ধকারে উজ্জ্বল আলোর ব্যবস্থা রাখুন।
কখন ডাক্তার দেখাবেন
১. যদি আপনার হাড়ে ফন্স্যাকচার বা চিড় ধরে।
২. যদি আপনার পিঠে, পাঁজরে, মেরুদণ্ডে কিংবা পায়ে হঠাৎ করে অপ্রত্যাশিত ব্যথা জেগে ওঠে।
৩. যদি আপনার দেহের পেছনে বা পিঠে বা কোমরে ব্যথার সঞ্চার হয় এবং আপনার পিঠ কুজ্বো হয়ে যেতে থাকে।
কীভাবে প্রতিরোধ করবেন
১. যথেষ্ট পরিমাণে শরীর চর্চা করুন। যেসব নারীরা মেনোপজ (ঋতুস্রাব বন্ধ হওয়া)-এর পরও ব্যায়াম বা শরীর চর্চা করেন তাদের থেকে যারা করেন না তাদের এই রোগে আক্রান্ত হবার ঝুঁকি বেশি। যেসব ব্যায়াম চর্চায় দেহের ভার নিয়ন্ত্রণের বিষয়গুলো প্রাধান্য পায়, যেমন হাটা এবং নৃত্যকলা ইত্যাদি - এগুলো দেহের হাড়গুলো উৎপাদনক্ষম কোষগুলোকে উদ্দীপ্ত এবং মজবুত করে তোলে এবং হাড়ের ক্ষয় সংক্রান্ত রোগকে জন্ম নেয়া থেকে বিরত রাখে।
২. আপনার খাদ্য তালিকায় যেন ক্যালসিয়াম প্রচুর পরিমাণে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখবেন। দুধের তৈরি খাদ্য দ্রব্য, পাতাসমৃদ্ধ সবুজ শাকসব্জি, এবং এ্যালমণ্ডে (কাঠবাদাম) প্রচুর ক্যালসিয়াম রয়েছে। যাদের হাড়ের ক্ষয় সংক্রান্ত রোগের ঝুঁকি বেশি তাদের ১৫০০ মি.গ্রা এবং অন্যান্যদের ১০০০ মি.গ্রা ক্যালসিয়াম প্রতিদিন আহার করা উচিত।
৩. যদি আপনি ফার্মেসি থেকে ক্যালসিয়ামের সাপ্লিমেন্ট (বা ঘাটতি পূরণের) ট্যাবলেট খান সেক্ষেত্রে মনে রাখবেন এগুলোর মধ্যে কার্যকর ক্যালসিয়ামের পরিমাণের তারতম্য দেখা যায়। দেহে হাড়ের ক্ষয় রোধে সবচে উপযোগী উপাদান হলো ক্যালসিয়াম কার্বোনেট (ওষুধের বোতলের গায়ে লেবেলে দেখে নিন ক্যালসিয়াম উপাদানের পরিমাণ কতোটুকু)। আরও লক্ষ্য করে দেখুন লেবেলে এরকম কিছু উল্লেখ রয়েছে কি না - যেমন, “ইউএসপি এর গুণ, বিশুদ্ধতা এবং প্রভাব অক্ষুণí রেখে প্রস্তুত করা হয়েছে।) কিংবা “ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষার মাধ্যমে দেখা হয়েছে যে সেবনের ৬০ মিনিটের মধ্যেই এ ওষুধ হজম হয়ে যায়।” এর মানে হলো এই ওষুধের ক্যালসিয়াম আপনার দেহে সহজেই পাচ্য হবে। খাবারের সাথে বা পরে এই ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট সেবন করবেন তবে একসাথে ৫০০ মি.গ্রামের বেশি সেবন করবেন না। প্রতিদিন আট থেকে দশ গ্লাশ পানি পান করুন যাতে আপনার কোষ্ঠকাঠিন্য না হয় এবং কিডনিতে পাথর হবার সামান্য ঝুঁকি থেকেও মুক্ত থাকতে পারেন। (তবে আপনার বা আপনার পরিবারের কারোর যদি কিডনিতে পাথর হবার অভিজ্ঞতা থাকে, সেক্ষেত্রে ক্যালসিয়াম সাপ্লিমেন্ট সেবনের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নিন)।
৪. যদি আপনার ওজন স্বাভাবিকের তুলনায় কম হয়, সেক্ষেত্রে স্বাভাবিক ওজন অর্জনের জন্যে চেষ্টা করুন, খুব চিকন হলে হাড়ের ঘনত্ব বা বোন ডেনসিটি কমে যায় এবং এই রোগের ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
৫. ধুমপান এবং মদ পান ত্যাগ করুন, কেননা এগুলোও হাড়ের ক্ষয় সংক্রান্ত রোগের সাথে যুক্ত।
৬. মাঝে মধ্যে সূর্যালোকে যাবেন। সূর্যরশ্মিতে মিশে থাকা ভিটামিন ডি দেহে ক্যালসিয়ামের পাচন বাড়িয়ে হাড়ের গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখে।
৭. প্রচুর দুধ পান করুন - ভিটামিন ডি এর আরও একটি উৎস; কিংবা ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করে দেখতে পারেন আপনি ভিটামিন ডি সাপ্লিমেন্ট সেবন করতে পারবেন কি না।
0 comments:
Post a Comment